Notes

"কিছুটা হিংস্র বিদ্রোহ চাই কিছুটা আঘাত
রক্তে কিছুটা উত্তাপ চাই, উষ্ণতা চাই
চাই কিছু লাল তীব্র আগুন।"
- রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
আমেরিকায় কালো মানুষের অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন তাকে অনেকেই অগ্রাধিকারের (privilege) সাথে তুলনা করছেন। আজ আমি অগ্রাধিকার (privilege) ও সাংবিধানিক অধিকার (constitutional right) নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করবো।
আমি কিছু লেখালেখি করি, এটাকে সন্মান করে কোন প্রকাশক যদি আগ্রহ নিয়ে বই ছাপতে চান তাহলে সেটাকে আমি বলবো অগ্রাধিকার। কারণ এটা না করলেও প্রকাশক পারতেন। এটাকে আমি সুযোগ হিসেবে উপভোগ করবো, অধিকার হিসেবে নয়।
রাস্তায় আমাকে কেউ গলাটিপে মেরে ফেলবে না, ছোটখাটো অপরাধে গুলি করে আমার বুক ঝাঝরা করে দেবে না, কেউ নিজের ঘর মনে করে আমারই ঘরে ঢুকে আমাকে শটগান দিয়ে মেরে ফেলবে না, আমাদের কিছু মৌলিক অধিকার রয়েছে যা আমরা রাষ্ট্রের সাথে গচ্ছিত রেখেছি সেগুলো কেউ ছিন্ন করবে না, এমন সব অধিকারকে আমি বলবো সাংবিধানিক অধিকার বা তার চেয়ে বেশি কিছু 'মানবাধিকার'।
জর্জ ফ্লয়েডের ভিডিওতে আমরা দেখি যে একজন পুলিশ একজন মানুষের ঘাড়ে হাঁটু গেড়ে চেপে ধরেছে এবং সে শ্বাস নেওয়ার জন্য আর্তচিৎকার করছে ।আমাদের এই আমেরিকায় চতুরতার সঙ্গে মেক্সিক্যানদের ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘন করানো হয় যেন তাদের এদেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া যায়। এমন হাজারো ঘটনা ঘটছে, অতিতেও ঘটেছে। এই সব বৈষম্য সহজভাবে বুঝতে হলে নেটফ্লিক্সে প্রচুর সিনেমা রয়েছে, ডকুমেন্টারি রয়েছে সেগুলো দেখলেই ধারনা পাবেন। রাষ্ট্রের সাথে মানুষের একটি সাংবিধানিক সম্পর্ক থাকে, আমেরিকা রাষ্ট্র সেই সম্পর্কের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
আমি আবারও বলছি, বিচারবহির্ভূতভাবে খুন না হওয়া কোনও অগ্রাধিকার (privilege) নয়, এটি ট্র্যাজেডির চেয়েও বেশি কিছু। এগুলোকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না করে আধুনিক আমেরিকা সংখ্যালঘু বা দরিদ্র বা নিষ্পেষিত কালো মানুষদের প্রতি যে অবিচার করে চলেছে তা শুধু দুঃখেরই নয় এটা রাষ্ট্রীয় অপরাধ।
প্রেসিডেন্ট লিঙ্কন দাসপ্রথা নিয়ে বলেছিলেন যে, দাসপ্রথা যদি ভুল (অপরাধ) না হয়, তাহলে কোন কিছুই অপরাধ নয়। আমি বলবো মানুষের ঘাড়ে হাটু দিয়ে চেপে মেরে ফেলা যদি অপরাধ না হয়, তাহলে কোন কিছুই অপরাধ নয়। ছোট ছোট অভিবাসী বাচ্চাদের খাচায় বন্ধ করে রাখা যদি অপরাধ না হয় তাহলে কোন কিছুই অপরাধ নয়। এগুলো কেবলমাত্র উদাহরণ। আরও বড় বড় সমস্যা রয়েছে যার সমাধান এখনই করা না গেলে এদেশ এক গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।

আপনারা ভাবছেন আমি সবসময় বই নিয়ে লিখি আজ এমন বিষয় টানছি কেন? বিশ্বাস করুন টানতে বাধ্য হচ্ছি। কোন এক বইয়ে পড়েছিলাম যে আপনি কিছু না করেও অন্যায় করতে পারবেন, যদি সেই সিস্টেমের গলদের প্রতিবাদ না করেন। মার্টিন লুথার কিং বলেছিলেন "যে কোনও জায়গায় অন্যায় হওয়া মানে সর্বত্রই ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি," তাই সমস্ত পৃথিবী এখন আমারিকান কালোদের এই আন্দোলনের সাথে একাত্মবোধ করেছে। কিং আরও বলেছিলেন, “আমরা পস্পরের সাথে এমন এক সম্পর্কে জড়িত যে আজ যা আমাকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে তা অন্যকেও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে”। আমি জানি আমার কাছ থেকে এমন সব কথা আপনারা আশা করেন না। কিন্তু ভাবুনতো কি হবে এত এত বই পড়ে যদি সেগুলো কোন কাজেই না আসে।
আমরা সকলে নিজের নিজের একটা বৃত্তের মধ্যে ঢুকে পড়েছি। এই বৃত্তের বাইরে কিছু হলে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা টাকা রোজগার করি, খাই দাই, রাতে টিভিতে সিনেমা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ি। এই হলো আমাদের জীবন।
আপনাকে বুঝতে হবে যে রাষ্ট্র যদি কাউকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ পায় তবে একদিন তারা আপনার অধিকার থেকেও আপনাকে বঞ্চিত করবে। প্রকৃতপক্ষে এটাই ক্ষমতার অপব্যবহার, এটি ট্রাম্প বা পুটিন যার হাতেই থাকুক না কেন, এর প্রয়োগকারী আমলারা এই সব দুর্বৃত্ত স্বৈরশাসকদের দ্বারা নিযুক্ত হয় এবং আদেশ অনুসরণ করেন। আপনি যদি ক্ষমতাকে একটুখানি ছাড় দেন তাহলে সে আরও একটু চাইবে। আপনার নিজের সাথে অন্যায় হচ্ছে না জেনে যখন আপনি অন্যায়কে ছাড় দেবেন তখন একদিন দেখবেন সেই অন্যায় আপনার গলাতেও হাটু তুলে দেবে। নিজের জন্য না হলেও অন্তত আপনাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে সোচ্চার হোন।
মার্টিন নিমোলারের গল্পটি বলি। নিমোলার ছিলেন জার্মান ধর্মতত্ত্ববিদ, তিনি শুরুর দিকে হিটলারের সাপোর্টার ছিলেন। হিটলারের অনেক কাজ নীতিগতভাবে সমর্থন করেননি কিন্তু সহ্য করেছিলেন। এমনকি কিছু কিছু মেনেও নিয়েছিলেন। যেমন ট্রাম্পের জন্য অনেকেই সেটি করছেন। ক্ষমতার সাথে আপোষ করে এমন মানুষ আমরা অহরহ দেখছি। শেষ পর্যন্ত নিমোলারের ভাগ্যে কি ঘটেছিল সেটি তার এক বিখ্যাত কবিতার মধ্যেই উল্লেখ আছে।
প্রথমে তারা কমিউনিষ্টদের ধরতে এসেছিল, এবং আমি কিছু বলি নি -
কারণ আমি কমিউনিষ্ট ছিলাম না।
তারপরে তারা শ্রমিক-আন্দোলনের কর্মীদের ধরতে এসেছিল, এবং আমি কিছু বলি নি -
কারণ আমি কোনও শ্রমিক-আন্দোলনের কর্মী ছিলাম না।
তারপর তারা ইহুদীদের ধরতে এসেছিল, এবং যথারীতি আমি কিছু বলি নি —
কারণ আমি ইহুদি ছিলাম না।
এরপর তারা একদিন আমাকে ধরতে এসেছিল — কিন্তু আমার পক্ষে কথা বলার মতো
তখন কেউই অবশিষ্ট ছিল না।
শেষ করছি এই বলে যে, অন্যায় সেটি যেখানেই হোক না কেন, আপনি যদি পাশে থাকেন অত্যাচারিতদের সঙ্গে থাকেন তাহলে তারাও আপনার পাশে থাকবে। যেকোন আন্দোলনের এইটাই মূল সুর। প্রতিবাদটাই আসল আন্দোলন, লুটপাটগুলো হলো গন্ডগোল।
আটলান্টা
৩রা জুন, ২০২০

"কিছুটা হিংস্র বিদ্রোহ চাই কিছুটা আঘাত
রক্তে কিছুটা উত্তাপ চাই, উষ্ণতা চাই
চাই কিছু লাল তীব্র আগুন।"
- রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
আমেরিকায় কালো মানুষের অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন তাকে অনেকেই অগ্রাধিকারের (privilege) সাথে তুলনা করছেন। আজ আমি অগ্রাধিকার (privilege) ও সাংবিধানিক অধিকার (constitutional right) নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করবো।
আমি কিছু লেখালেখি করি, এটাকে সন্মান করে কোন প্রকাশক যদি আগ্রহ নিয়ে বই ছাপতে চান তাহলে সেটাকে আমি বলবো অগ্রাধিকার। কারণ এটা না করলেও প্রকাশক পারতেন। এটাকে আমি সুযোগ হিসেবে উপভোগ করবো, অধিকার হিসেবে নয়।
রাস্তায় আমাকে কেউ গলাটিপে মেরে ফেলবে না, ছোটখাটো অপরাধে গুলি করে আমার বুক ঝাঝরা করে দেবে না, কেউ নিজের ঘর মনে করে আমারই ঘরে ঢুকে আমাকে শটগান দিয়ে মেরে ফেলবে না, আমাদের কিছু মৌলিক অধিকার রয়েছে যা আমরা রাষ্ট্রের সাথে গচ্ছিত রেখেছি সেগুলো কেউ ছিন্ন করবে না, এমন সব অধিকারকে আমি বলবো সাংবিধানিক অধিকার বা তার চেয়ে বেশি কিছু 'মানবাধিকার'।
জর্জ ফ্লয়েডের ভিডিওতে আমরা দেখি যে একজন পুলিশ একজন মানুষের ঘাড়ে হাঁটু গেড়ে চেপে ধরেছে এবং সে শ্বাস নেওয়ার জন্য আর্তচিৎকার করছে ।আমাদের এই আমেরিকায় চতুরতার সঙ্গে মেক্সিক্যানদের ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘন করানো হয় যেন তাদের এদেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া যায়। এমন হাজারো ঘটনা ঘটছে, অতিতেও ঘটেছে। এই সব বৈষম্য সহজভাবে বুঝতে হলে নেটফ্লিক্সে প্রচুর সিনেমা রয়েছে, ডকুমেন্টারি রয়েছে সেগুলো দেখলেই ধারনা পাবেন। রাষ্ট্রের সাথে মানুষের একটি সাংবিধানিক সম্পর্ক থাকে, আমেরিকা রাষ্ট্র সেই সম্পর্কের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
আমি আবারও বলছি, বিচারবহির্ভূতভাবে খুন না হওয়া কোনও অগ্রাধিকার (privilege) নয়, এটি ট্র্যাজেডির চেয়েও বেশি কিছু। এগুলোকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না করে আধুনিক আমেরিকা সংখ্যালঘু বা দরিদ্র বা নিষ্পেষিত কালো মানুষদের প্রতি যে অবিচার করে চলেছে তা শুধু দুঃখেরই নয় এটা রাষ্ট্রীয় অপরাধ।
প্রেসিডেন্ট লিঙ্কন দাসপ্রথা নিয়ে বলেছিলেন যে, দাসপ্রথা যদি ভুল (অপরাধ) না হয়, তাহলে কোন কিছুই অপরাধ নয়। আমি বলবো মানুষের ঘাড়ে হাটু দিয়ে চেপে মেরে ফেলা যদি অপরাধ না হয়, তাহলে কোন কিছুই অপরাধ নয়। ছোট ছোট অভিবাসী বাচ্চাদের খাচায় বন্ধ করে রাখা যদি অপরাধ না হয় তাহলে কোন কিছুই অপরাধ নয়। এগুলো কেবলমাত্র উদাহরণ। আরও বড় বড় সমস্যা রয়েছে যার সমাধান এখনই করা না গেলে এদেশ এক গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।

আপনারা ভাবছেন আমি সবসময় বই নিয়ে লিখি আজ এমন বিষয় টানছি কেন? বিশ্বাস করুন টানতে বাধ্য হচ্ছি। কোন এক বইয়ে পড়েছিলাম যে আপনি কিছু না করেও অন্যায় করতে পারবেন, যদি সেই সিস্টেমের গলদের প্রতিবাদ না করেন। মার্টিন লুথার কিং বলেছিলেন "যে কোনও জায়গায় অন্যায় হওয়া মানে সর্বত্রই ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি," তাই সমস্ত পৃথিবী এখন আমারিকান কালোদের এই আন্দোলনের সাথে একাত্মবোধ করেছে। কিং আরও বলেছিলেন, “আমরা পস্পরের সাথে এমন এক সম্পর্কে জড়িত যে আজ যা আমাকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে তা অন্যকেও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে”। আমি জানি আমার কাছ থেকে এমন সব কথা আপনারা আশা করেন না। কিন্তু ভাবুনতো কি হবে এত এত বই পড়ে যদি সেগুলো কোন কাজেই না আসে।
আমরা সকলে নিজের নিজের একটা বৃত্তের মধ্যে ঢুকে পড়েছি। এই বৃত্তের বাইরে কিছু হলে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা টাকা রোজগার করি, খাই দাই, রাতে টিভিতে সিনেমা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ি। এই হলো আমাদের জীবন।
আপনাকে বুঝতে হবে যে রাষ্ট্র যদি কাউকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ পায় তবে একদিন তারা আপনার অধিকার থেকেও আপনাকে বঞ্চিত করবে। প্রকৃতপক্ষে এটাই ক্ষমতার অপব্যবহার, এটি ট্রাম্প বা পুটিন যার হাতেই থাকুক না কেন, এর প্রয়োগকারী আমলারা এই সব দুর্বৃত্ত স্বৈরশাসকদের দ্বারা নিযুক্ত হয় এবং আদেশ অনুসরণ করেন। আপনি যদি ক্ষমতাকে একটুখানি ছাড় দেন তাহলে সে আরও একটু চাইবে। আপনার নিজের সাথে অন্যায় হচ্ছে না জেনে যখন আপনি অন্যায়কে ছাড় দেবেন তখন একদিন দেখবেন সেই অন্যায় আপনার গলাতেও হাটু তুলে দেবে। নিজের জন্য না হলেও অন্তত আপনাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে সোচ্চার হোন।
মার্টিন নিমোলারের গল্পটি বলি। নিমোলার ছিলেন জার্মান ধর্মতত্ত্ববিদ, তিনি শুরুর দিকে হিটলারের সাপোর্টার ছিলেন। হিটলারের অনেক কাজ নীতিগতভাবে সমর্থন করেননি কিন্তু সহ্য করেছিলেন। এমনকি কিছু কিছু মেনেও নিয়েছিলেন। যেমন ট্রাম্পের জন্য অনেকেই সেটি করছেন। ক্ষমতার সাথে আপোষ করে এমন মানুষ আমরা অহরহ দেখছি। শেষ পর্যন্ত নিমোলারের ভাগ্যে কি ঘটেছিল সেটি তার এক বিখ্যাত কবিতার মধ্যেই উল্লেখ আছে।
প্রথমে তারা কমিউনিষ্টদের ধরতে এসেছিল, এবং আমি কিছু বলি নি -
কারণ আমি কমিউনিষ্ট ছিলাম না।
তারপরে তারা শ্রমিক-আন্দোলনের কর্মীদের ধরতে এসেছিল, এবং আমি কিছু বলি নি -
কারণ আমি কোনও শ্রমিক-আন্দোলনের কর্মী ছিলাম না।
তারপর তারা ইহুদীদের ধরতে এসেছিল, এবং যথারীতি আমি কিছু বলি নি —
কারণ আমি ইহুদি ছিলাম না।
এরপর তারা একদিন আমাকে ধরতে এসেছিল — কিন্তু আমার পক্ষে কথা বলার মতো
তখন কেউই অবশিষ্ট ছিল না।
শেষ করছি এই বলে যে, অন্যায় সেটি যেখানেই হোক না কেন, আপনি যদি পাশে থাকেন অত্যাচারিতদের সঙ্গে থাকেন তাহলে তারাও আপনার পাশে থাকবে। যেকোন আন্দোলনের এইটাই মূল সুর। প্রতিবাদটাই আসল আন্দোলন, লুটপাটগুলো হলো গন্ডগোল।
আটলান্টা
৩রা জুন, ২০২০
Black Lives Matter
George Floyd
Notes

গত কয়েকদিন ধরে আমেরিকা বর্ণবৈষম্য ইস্যুতে জ্বলছে। আমি যেখানে থাকি সেখানে সাদা মানুষের সংখ্যাই বেশি। শহরের একাংশ যখন প্রতিবাদে সোচ্চার তখন উল্টো দিকে দামি রেস্তোরাঁগুলোয় বসার জায়গা নেই। এই হলো ভোগবাদী আমেরিকা। এদেশের যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমন কলঙ্কিত দিকও রয়েছে। আজ সেই অন্ধকার নিয়ে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে। আমি জানি অনেকেই যারা এই ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার আন্দোলন দেখেন তারা কেবল দাঙ্গা এবং লুটপাটই দেখেন। তাদের প্রথম প্রতিক্রিয়া হলো "two wrongs don’t make a right"। আমি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পক্ষে, কারণ মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এবং মহাত্মা গান্ধীর আমার সামাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তাধারার উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। তবে সাথে আমি আপনাদের একটি অনুরোধ করছি, যদি আপনি ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারটির গুরুত্ব বুঝে থাকেন তবে এই মুহুর্তে একটি কিশোর কৃষ্ণাঙ্গ ছেলেমেয়ের টিভিতে খবর দেখার দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবুন। তারা কালো মানুষগুলির প্রতি ঘৃণা ও গোঁড়ামি দেখছে এবং দেখে বড় হচ্ছে। এবং ভাবছে শুধু কালো বলেই এমন একদিন তার সাথেও হতে পারে। বিষয়টি কতটা আঘাত করতে পারে তাদের মনের উপর তা ভাবতে পারেন? আমি তো পুরোপুরি পারি না। একটা বিষয় কি আমাকে কেউ বুঝিয়ে বলবেন, ব্রিটিশদের অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর জন্য যতটা আমেরিকানরা ফাউন্ডিং-ফাদারদের সন্মানের সাথে স্মরণ করে, ততটা এই জাতিগত অবিচারের বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের জন্য নয় কেন? আমেরিকান সাদারা কি ভুলে গেছে যে তাদের পিতৃপুরুষরাও এভাবে সব পুড়িয়ে দিয়েছিল, শুধুমাত্র ট্যাক্স বাড়িয়ে দেওয়ার কারনে তারা লুটপাট করেছিল। সেই সব সহিংসতার জন্যেই আজ আমেরিকানরা বাকস্বাধীনতা ও এমন অনেক সুবিধা ভোগ করছে। অবস্থার বাস্তব এবং ক্রম পরিবর্তনে মানুষের প্রাকৃতিক ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা যখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল, তখন সেই স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্যই রাষ্ট্রের কাছে সে সমর্পণ করেছিল তার নিজের স্বাধীনতা। রাষ্ট্রের কর্তব্য হচ্ছে সামগ্রিকভাবে ব্যক্তির স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। স্বাধীনতাকে হারাবার জন্য মানুষ তার স্বাধীনতাকে সমর্পণ করেনি। তা সে করতে পারে না। কারণ মানুষ কথার অর্থই হচ্ছে স্বাধীনতা। বিকৃত চিন্তার তথাকথিত সভ্য মানুষ এই কথাটাই ভুলে যায়। তাই সে স্বাধীনতা বলতে বােঝে অপরের উপর অধীনতা চাপিয়ে দেওয়ার স্বাধীনতা। মানুষের সাথে রাষ্ট্রের সেই সামাজিক চুক্তি যখন খর্ব হয় তখন two wrongs don’t make a right বলে কোন লাভ হয় না। আমি বলছি না যে এর মধ্যে কিছু বদ মানুষ ঢুকে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করছে না। এই সুযোগ সন্ধানীরা টিকে থাকবে না প্রতিবাদটাই টিকে থাকবে।
হ্যাশট্যাগ ব্ল্যাকলাইভস্ম্যাটার আন্দোলনের পিছনের মূল ধারণা সম্পর্কে চিন্তা করুন ভাবুন এটা কেন শুরু হয়েছিল। ভবিষ্যতের ইতিহাসের বইগুলিতে যখন এটি লেখা হবে তখন আপনি ইতিহাসের কোন দিকে থাকতে চাইবেন? আমার মনে হয় সময় এসেছে আমেরিকার পতাকা এখন উল্টো করে ধরার, যেমনটি এই ছবিতে আমরা দেখছি।

গত কয়েকদিন ধরে আমেরিকা বর্ণবৈষম্য ইস্যুতে জ্বলছে। আমি যেখানে থাকি সেখানে সাদা মানুষের সংখ্যাই বেশি। শহরের একাংশ যখন প্রতিবাদে সোচ্চার তখন উল্টো দিকে দামি রেস্তোরাঁগুলোয় বসার জায়গা নেই। এই হলো ভোগবাদী আমেরিকা। এদেশের যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমন কলঙ্কিত দিকও রয়েছে। আজ সেই অন্ধকার নিয়ে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে। আমি জানি অনেকেই যারা এই ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার আন্দোলন দেখেন তারা কেবল দাঙ্গা এবং লুটপাটই দেখেন। তাদের প্রথম প্রতিক্রিয়া হলো "two wrongs don’t make a right"। আমি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পক্ষে, কারণ মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এবং মহাত্মা গান্ধীর আমার সামাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তাধারার উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। তবে সাথে আমি আপনাদের একটি অনুরোধ করছি, যদি আপনি ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারটির গুরুত্ব বুঝে থাকেন তবে এই মুহুর্তে একটি কিশোর কৃষ্ণাঙ্গ ছেলেমেয়ের টিভিতে খবর দেখার দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবুন। তারা কালো মানুষগুলির প্রতি ঘৃণা ও গোঁড়ামি দেখছে এবং দেখে বড় হচ্ছে। এবং ভাবছে শুধু কালো বলেই এমন একদিন তার সাথেও হতে পারে। বিষয়টি কতটা আঘাত করতে পারে তাদের মনের উপর তা ভাবতে পারেন? আমি তো পুরোপুরি পারি না। একটা বিষয় কি আমাকে কেউ বুঝিয়ে বলবেন, ব্রিটিশদের অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর জন্য যতটা আমেরিকানরা ফাউন্ডিং-ফাদারদের সন্মানের সাথে স্মরণ করে, ততটা এই জাতিগত অবিচারের বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের জন্য নয় কেন? আমেরিকান সাদারা কি ভুলে গেছে যে তাদের পিতৃপুরুষরাও এভাবে সব পুড়িয়ে দিয়েছিল, শুধুমাত্র ট্যাক্স বাড়িয়ে দেওয়ার কারনে তারা লুটপাট করেছিল। সেই সব সহিংসতার জন্যেই আজ আমেরিকানরা বাকস্বাধীনতা ও এমন অনেক সুবিধা ভোগ করছে। অবস্থার বাস্তব এবং ক্রম পরিবর্তনে মানুষের প্রাকৃতিক ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা যখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল, তখন সেই স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্যই রাষ্ট্রের কাছে সে সমর্পণ করেছিল তার নিজের স্বাধীনতা। রাষ্ট্রের কর্তব্য হচ্ছে সামগ্রিকভাবে ব্যক্তির স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। স্বাধীনতাকে হারাবার জন্য মানুষ তার স্বাধীনতাকে সমর্পণ করেনি। তা সে করতে পারে না। কারণ মানুষ কথার অর্থই হচ্ছে স্বাধীনতা। বিকৃত চিন্তার তথাকথিত সভ্য মানুষ এই কথাটাই ভুলে যায়। তাই সে স্বাধীনতা বলতে বােঝে অপরের উপর অধীনতা চাপিয়ে দেওয়ার স্বাধীনতা। মানুষের সাথে রাষ্ট্রের সেই সামাজিক চুক্তি যখন খর্ব হয় তখন two wrongs don’t make a right বলে কোন লাভ হয় না। আমি বলছি না যে এর মধ্যে কিছু বদ মানুষ ঢুকে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করছে না। এই সুযোগ সন্ধানীরা টিকে থাকবে না প্রতিবাদটাই টিকে থাকবে।
হ্যাশট্যাগ ব্ল্যাকলাইভস্ম্যাটার আন্দোলনের পিছনের মূল ধারণা সম্পর্কে চিন্তা করুন ভাবুন এটা কেন শুরু হয়েছিল। ভবিষ্যতের ইতিহাসের বইগুলিতে যখন এটি লেখা হবে তখন আপনি ইতিহাসের কোন দিকে থাকতে চাইবেন? আমার মনে হয় সময় এসেছে আমেরিকার পতাকা এখন উল্টো করে ধরার, যেমনটি এই ছবিতে আমরা দেখছি।
Notes
সৈয়দ মুজতবা আলী
বই আমাকে শেখায়
চিন্তা করা।
চিন্তাশীল হওয়া
পুনর্বিবেচনা করা।
যা চিন্তা করলাম তা
ঝালিয়ে নেওয়া।
চিন্তা কিভাবে করতে হয়
তাও বই শেখায়
চিন্তারও যে চিন্তা থাকে
তা ঐ বই থেকে শেখা।
বই হলো ছবির মাঝে প্রতিকৃতি
যা বলে চিন্তা করো।
বই কেনা - সৈয়দ মুজতবা আলী
মাছি-মারা-কেরানী নিয়ে যত ঠাট্টা-রসিকতাই করি না কেন, মাছি ধরা যে কত শক্ত, সে কথা পর্যবেক্ষণশীল ব্যক্তিমাত্রই স্বীকার করে নিয়েছেন। মাছিকে যেদিক দিয়েই ধরতে যান না কেন, সে ঠিক সময় উড়ে যাবেই। কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গিয়েছে, দুটো চোখ নিয়েই মাছির কারবার নয়, তার সমস্ত মাথা জুড়ে নাকি গাদা গাদা চোখ বসানো আছে। আমরা দেখতে পাই শুধু সামনের দিক, কিন্তু মাছির মাথার চতুর্দিকে চক্রাকারে চোখ বসানো আছে বলে সে একই সময়ে সমস্ত পৃথিবীটা দেখতে পায়।
তাই নিয়ে গুণী ও জ্ঞানী আনাতোল ফ্রাঁস দুঃখ করে বলেছেন, ‘হায়, আমার মাথার চতুর্দিকে যদি চোখ বসানো থাকতো, তাহলে আচক্রবালবিস্তৃত এই সুন্দরী ধরণীর সম্পূর্ণ সৌন্দর্য একসঙ্গেই দেখতে পেতুম।’
কথাটা যে খাঁটি, সে-কথা চোখ বন্ধ করে একটুখানি ভেবে নিলেই বোঝা যায়। এবং বুঝে নিয়ে তখন এক আপশোস ছাড়া অন্য কিছু করবার থাকে না। কিন্তু এইখানেই ফ্রাঁসের সঙ্গে সাধারণ লোকের তফাৎ। ফ্রাঁস সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, ‘কিন্তু আমার মনের চোখ তো মাত্র একটি কিংবা দুটি নয়। মনের চোখ বাড়ানো-কমানো তো সম্পূর্ণ আমার হাতে। নানা জ্ঞানবিজ্ঞান যতই আমি আয়ত্ত করতে থাকি, ততই এক-একটা করে আমার মনের চোখ ফুটতে থাকে।’
পৃথিবীর আর সব সভ্য জাত যতই চোখের সংখ্যা বাড়াতে ব্যস্ত, আমরা ততই আরব্য-উপন্যাসের এক-চোখ দৈত্যের মত ঘোঁৎ ঘোঁৎ করি আর চোখ বাড়াবার কথা তুললেই চোখ রাঙাই।
চোখ বাড়াবার পন্থাটা কি? প্রথমত—বই পড়া, এবং তার জন্য দরকার বই কেনার প্রবৃত্তি।
মনের চোখ ফোটানোর আরো একটা প্রয়োজন আছে। বারট্রান্ড রাসেল বলেছেন, ‘সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে, মনের ভিতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার ভিতর ডুব দেওয়া। যে যত বেশি ভুবন সৃষ্টি করতে পারে, যন্ত্রণা এড়াবার ক্ষমতা তার ততই বেশি হয়।’
অর্থাৎ সাহিত্যে সান্ত্বনা না পেলে দর্শন, দর্শনে কুলিয়ে উঠতে না পারলে ইতিহাস, ইতিহাস হার মানলে ভূগোল—আরো কত কি।
কিন্তু প্রশ্ন, এই অসংখ্য ভুবন সৃষ্টি করি কি প্রকারে?
বই পড়ে। দেশ ভ্রমণ করে। কিন্তু দেশ ভ্রমণ করার মত সামর্থ্য এবং স্বাস্থ্য সকলের থাকে না, কাজেই শেষ পর্যন্ত বাকি থাকে বই।
কিন্তু বাঙালি নাগর ধর্মের কাহিনী শোনে না। তার মুখে ঐ এক কথা ‘অত কাঁচা পয়হা কোথায়, বাওয়া, যে বই কিনব?’
কথাটার মধ্যে একটুখানি সত্য—কনিষ্ঠাপরিমাণ—লুকনো রয়েছে। সেইটুকু এই যে, বই কিনতে পয়সা লাগে—ব্যস। এর বেশি আর কিছু নয়।
বইয়ের দাম যদি আরো কমানো যায়, তবে আরো অনেক বেশি বই বিক্রি হবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তাই যদি প্রকাশককে বলা হয়, ‘বইয়ের দাম কমাও’, তবে সে বলে ‘বই যথেষ্ট পরিমাণে বিক্রি না হলে বইয়ের দাম কমাবো কি করে?’
‘কেন মশাই, সংখ্যার দিক দিয়ে দেখতে গেলে বাঙলা পৃথিবীর ছয় অথবা সাত নম্বরের ভাষা। এই ধরুন ফরাসি ভাষা। এ-ভাষায় বাঙলার তুলনায় ঢের কম লোক কথা কয়। অথচ যুদ্ধের পূর্বে বারো আনা, চৌদ্দ আনা, জোর পাঁচ সিকে দিয়ে যে-কোন ভাল বই কেনা যেত। আপনারা পারেন না কেন?’
‘আজ্ঞে, ফরাসি প্রকাশক নির্ভয়ে যে-কোন ভালো বই এক ঝট্কায় বিশ হাজার ছাপাতে পারে। আমাদের নাভিশ্বাস ওঠে দু’হাজার ছাপাতে গেলেই, বেশি ছাপিয়ে দেউলে হব নাকি?’
তাই এই অচ্ছেদ্য চক্র। বই সস্তা নয় বলে লোকে বই কেনে না, আর লোকে বই কেনে না বলে বই সস্তা করা যায় না।
এ চক্র ছিন্ন তো করতেই হবে। করবে কে? প্রকাশক না ক্রেতা? প্রকাশকের পক্ষে করা কঠিন, কারণ ঐ দিয়ে পেটের ভাত যোগাড় করে। সে বঁটুকিটা নিতে নারাজ। এক্সপেরিমেন্ট করতে নারাজ—দেউলে হওয়ার ভয়ে।
কিন্তু বই কিনে কেউ তো কখনো দেউলে হয় নি। বই কেনার বাজেট যদি আপনি তিনগুণও বাড়িয়ে দেন, তবু তো আপনার দেউলে হবার সম্ভাবনা নেই। মাঝখান থেকে আপনি ফ্রাঁসের মাছির মত অনেকগুলি চোখ পেয়ে যাবেন, রাসেলের মত এক গাদা নূতন ভুবন সৃষ্টি করে ফেলবেন।
মার্ক টুয়েনের লাইব্রেরিখানা নাকি দেখবার মত ছিল। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত বই, বই, শুধু বই। এমন কি কর্পেটের উপরও গাদা গাদা বই স্তূপীকৃত হয়ে পড়ে থাকত—পা ফেলা ভার। এক বন্ধু তাই মার্ক টুয়েনকে বললেন, ‘বইগুলো নষ্ট হচ্ছে; গোটা কয়েক শেলফ যোগাড় করছ না কেন?’
মার্ক টুয়েন খানিকক্ষণ মাথা নিচু করে ঘাড় চুলকে বললেন, ‘ভাই, বলছে ঠিকই।—কিন্তু লাইব্রেরিটা যে কায়দায় গড়ে তুলেছি, শেলফ তো আর সে কায়দায় যোগাড় করতে পারিনে। শেলফ তো আর বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার চাওয়া যায় না।’
শুধু মার্ক টুয়েনই না, দুনিয়ার অধিকাংশ লোকই লাইব্রেরি গড়ে তোলে কিছু বই কিনে: আর কিছু বই বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার করে ফেরৎ না দিয়ে। যে-মানুষ পরের জিনিস গলা কেটে ফেললেও ছোবে না। সেই লোকই দেখা যায় বইয়ের বেলা সর্বপ্রকার বিবেক-বিবর্জিত, তার কারণটা কি?
এক আরব পণ্ডিতের লেখাতে সমস্যাটার সমাধান পেলুম।
পণ্ডিত লিখেছেন, ‘ধনীরা বলে, পয়সা কামানো দুনিয়াতে সবচেয়ে কঠিন কর্ম। কিন্তু জ্ঞানীরা বলেন, না, জ্ঞানার্জন সবচেয়ে শক্ত কাজ। এখন প্রশ্ন, কার দাবিটা ঠিক, ধনীর না জ্ঞানীর? আমি নিজে জ্ঞানের সন্ধানে ফিরি, কাজেই আমার পক্ষে নিরপেক্ষ হওয়া কঠিন। তবে একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করেছি, সেইটো আমি বিচক্ষণ জনের চক্ষুগোচর করাতে চাই। ধনীর মেহন্নতের ফল হ’ল টাকা। সে ফল যদি কেউ জ্ঞানীর হাতে তুলে দেয়, তবে তিনি সেটা পরমানন্দে কাজে লাগান, এবং শুধু তাই নয়, অধিকাংশ সময়েই দেখা যায়, জ্ঞানীরা পয়সা পেলে খরচ করতে পারেন ধনীদের চেয়ে অনেক ভালো পথে, ঢের উত্তম পদ্ধতিতে। পক্ষাস্তরে জ্ঞানচর্চার ফল সঞ্চিত থাকে পুস্তকরাজিতে এবং সে ফল ধনীদের হাতে গায়ে পড়ে তুলে ধরলেও তারা তার ব্যবহার করতে জানে না-বই পড়তে পারে না।’
আরব পণ্ডিত তাই বক্তব্য শেষ করেছেন কিউ. ই. ডি দিয়ে ‘অতএব প্রমাণ হল জ্ঞানার্জন ধনার্জনের চেয়ে মহত্তর।’
তাই প্রকৃত মানুষ জ্ঞানের বাহন পুস্তক যোগাড় করার জন্য অকাতরে অর্থব্যয় করে। একমাত্র বাঙলা দেশ ছাড়া।
সেদিন তাই নিয়ে শোকপ্রকাশ করাতে আমার জনৈক বন্ধু একটি গল্প বললেন। এক ড্রইংরুম-বিহারিণী গিয়েছেন বাজারে স্বামীর জন্মদিনের জন্য সওগাত কিনতে। দোকানদার এটা দেখায়, সেটা শোকায়, এটা নাড়ে, সেটা কাড়ে, কিন্তু গরবিনী ধনীর (উভয়ার্থে) কিছুই আর মনঃপূত হয় না। সব কিছুই তাঁর স্বামীর ভাণ্ডারে রয়েছে। শেষটায় দোকানদার নিরাশ হয়ে বললে, ‘তবে একখানা ভাল বই দিলে হয় না?’ গরবিনী নাসিকা কুঞ্চিত করে বললেন, ‘সেও তো ওঁর একখানা রয়েছে।’
যেমন স্ত্রী তেমনি স্বামী। একখানা বইই তাদের পক্ষে যথেষ্ট।
অথচ এই বই জিনিসটার প্রকৃত সম্মান করতে জানে ফ্রান্স। কাউকে মোক্ষম মারাত্মক অপমান করতে হলেও তারা ঐ জিনিস দিয়েই করে। মনে করুন আপনার সবচেয়ে ভক্তিভালবাসা দেশের জন্য। তাই যদি কেউ আপনাকে ডাহা বেইজজৎ করতে চায়; তবে সে অপমান করবে। আপনার দেশকে। নিজের অপমান আপনি হয়ত মনে মনে পঞ্চাশ গুণে নিয়ে সয়ে যাবেন, কিন্তু দেশের অপমান আপনাকে দংশন করবে বহুদিন ধরে।
আঁদ্রে জিদে’র মেলা বন্ধুবান্ধব ছিলেন—অধিকাংশই নামকরা লেখক। জিদ রুশিয়া থেকে ফিরে এসে সোভিয়েট রাজ্যের বিরুদ্ধে একখানা প্রাণঘাতী কেতাব ছাড়েন। প্যারিসের স্তালিনীয়ারা তখন লাগল জিদের পিছনে—গালিগালাজ কটুকাটব্য করে জিদের প্রাণ অতিষ্ঠা করে তুললো। কিন্তু আশ্চর্য, জিদের লেখক বন্ধুদের অধিকাংশই চুপ করে সব কিছু শুনে গেলেন, জিদের হয়ে লড়লেন না। জিদের জিগরে জোর চোট লাগল-তিনি স্থির করলেন, এদের একটা শিক্ষা দিতে হবে।
কাগজে বিজ্ঞাপন বেরল। জিদ তাঁর লাইব্রেরিখানা নিলামে বেচে দেবেন বলে মনস্থির করেছেন। প্যারিস খবর শুনে প্রথমটায় মূর্ছা গেল, কিন্তু সম্বিতে ফেরা মাত্রই মুক্তকচ্ছ হয়ে ছুটলো নিলাম-খানার দিকে।
সেখানে গিয়ে অবস্থা দেখে সকলেরই চক্ষুস্থির।
যে-সব লেখক জিদের হয়ে লড়েন নি, তাদের যে-সব বই তারা জিদকে স্বাক্ষর সহ উপহার দিয়েছিলেন, জিদ মাত্র সেগুলো নিলামে চড়িয়েছেন। জিদ শুধু জঞ্জালই বেচে ফেলছেন।
প্যারিসের লোক তখন যে অট্টহাস্য ছেড়েছিল, সেটা আমি ভূমধ্যসাগরের মধ্যিখানে জাহাজে বসে শুনতে পেয়েছিলুম—কারণ খবরটার গুরুত্ব বিবেচনা করে রয়টার সেটা বেতারে ছড়িয়েছিলেন-জাহাজের টাইপ-করা একশো লাইনি দৈনিক কাগজ সেটা সাড়ম্বরে প্রকাশ করেছিল।
অপমানিত লেখকরা ডবল তিন ডবল দামে আপন আপনি বই লোক পাঠিয়ে তড়িঘড়ি কিনিয়ে নিয়েছিলেন-যত কম লোকে কেনা-কাটার খবর জানতে পারে ততই মঙ্গল। (বাঙলা দেশে নাকি একবার এরকম টিকিট বিক্রি হয়েছিল!)
শুনতে পাই, এঁরা নাকি জিদকে কখনো ক্ষমা করেন নি।
(মূল লেখার বানানরীতি অনুসরণ করা হলো)
বই কেনা
by rit.oneবই আমাকে শেখায়
চিন্তা করা।
চিন্তাশীল হওয়া
পুনর্বিবেচনা করা।
যা চিন্তা করলাম তা
ঝালিয়ে নেওয়া।
চিন্তা কিভাবে করতে হয়
তাও বই শেখায়
চিন্তারও যে চিন্তা থাকে
তা ঐ বই থেকে শেখা।
বই হলো ছবির মাঝে প্রতিকৃতি
যা বলে চিন্তা করো।
মানুষ বই আনন্দের জন্য পড়ে না। যদি তাই হতো তবে প্রচুর বই বিক্রি হতো। যারা বই আনন্দের জন্য পড়ে তাদের মধ্যে অল্পকিছু মানুষ বই কেনে। যারা বই কেনে তাদের মধ্যেও অল্পকিছু মানুষ কেনে চিন্তাশীল বই। চিন্তাশীল বই যদি কালেভদ্রে হয়ে যায় বেস্টসেলার তবু পড়া হয় না। সাজিয়ে রাখা হয়।
তাই বাজারে ভোঁতা বইয়ের সংখ্যাই বেশি। চোখা-ভোঁতা যে বই কিনুন মনে রাখবেন যেবই আপনাকে ভাবায় না সেবই বই নয়।
বই কেনা - সৈয়দ মুজতবা আলী
মাছি-মারা-কেরানী নিয়ে যত ঠাট্টা-রসিকতাই করি না কেন, মাছি ধরা যে কত শক্ত, সে কথা পর্যবেক্ষণশীল ব্যক্তিমাত্রই স্বীকার করে নিয়েছেন। মাছিকে যেদিক দিয়েই ধরতে যান না কেন, সে ঠিক সময় উড়ে যাবেই। কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গিয়েছে, দুটো চোখ নিয়েই মাছির কারবার নয়, তার সমস্ত মাথা জুড়ে নাকি গাদা গাদা চোখ বসানো আছে। আমরা দেখতে পাই শুধু সামনের দিক, কিন্তু মাছির মাথার চতুর্দিকে চক্রাকারে চোখ বসানো আছে বলে সে একই সময়ে সমস্ত পৃথিবীটা দেখতে পায়।
তাই নিয়ে গুণী ও জ্ঞানী আনাতোল ফ্রাঁস দুঃখ করে বলেছেন, ‘হায়, আমার মাথার চতুর্দিকে যদি চোখ বসানো থাকতো, তাহলে আচক্রবালবিস্তৃত এই সুন্দরী ধরণীর সম্পূর্ণ সৌন্দর্য একসঙ্গেই দেখতে পেতুম।’
কথাটা যে খাঁটি, সে-কথা চোখ বন্ধ করে একটুখানি ভেবে নিলেই বোঝা যায়। এবং বুঝে নিয়ে তখন এক আপশোস ছাড়া অন্য কিছু করবার থাকে না। কিন্তু এইখানেই ফ্রাঁসের সঙ্গে সাধারণ লোকের তফাৎ। ফ্রাঁস সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, ‘কিন্তু আমার মনের চোখ তো মাত্র একটি কিংবা দুটি নয়। মনের চোখ বাড়ানো-কমানো তো সম্পূর্ণ আমার হাতে। নানা জ্ঞানবিজ্ঞান যতই আমি আয়ত্ত করতে থাকি, ততই এক-একটা করে আমার মনের চোখ ফুটতে থাকে।’
পৃথিবীর আর সব সভ্য জাত যতই চোখের সংখ্যা বাড়াতে ব্যস্ত, আমরা ততই আরব্য-উপন্যাসের এক-চোখ দৈত্যের মত ঘোঁৎ ঘোঁৎ করি আর চোখ বাড়াবার কথা তুললেই চোখ রাঙাই।
চোখ বাড়াবার পন্থাটা কি? প্রথমত—বই পড়া, এবং তার জন্য দরকার বই কেনার প্রবৃত্তি।
মনের চোখ ফোটানোর আরো একটা প্রয়োজন আছে। বারট্রান্ড রাসেল বলেছেন, ‘সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে, মনের ভিতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার ভিতর ডুব দেওয়া। যে যত বেশি ভুবন সৃষ্টি করতে পারে, যন্ত্রণা এড়াবার ক্ষমতা তার ততই বেশি হয়।’
অর্থাৎ সাহিত্যে সান্ত্বনা না পেলে দর্শন, দর্শনে কুলিয়ে উঠতে না পারলে ইতিহাস, ইতিহাস হার মানলে ভূগোল—আরো কত কি।
কিন্তু প্রশ্ন, এই অসংখ্য ভুবন সৃষ্টি করি কি প্রকারে?
বই পড়ে। দেশ ভ্রমণ করে। কিন্তু দেশ ভ্রমণ করার মত সামর্থ্য এবং স্বাস্থ্য সকলের থাকে না, কাজেই শেষ পর্যন্ত বাকি থাকে বই।
কিন্তু বাঙালি নাগর ধর্মের কাহিনী শোনে না। তার মুখে ঐ এক কথা ‘অত কাঁচা পয়হা কোথায়, বাওয়া, যে বই কিনব?’
কথাটার মধ্যে একটুখানি সত্য—কনিষ্ঠাপরিমাণ—লুকনো রয়েছে। সেইটুকু এই যে, বই কিনতে পয়সা লাগে—ব্যস। এর বেশি আর কিছু নয়।
বইয়ের দাম যদি আরো কমানো যায়, তবে আরো অনেক বেশি বই বিক্রি হবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তাই যদি প্রকাশককে বলা হয়, ‘বইয়ের দাম কমাও’, তবে সে বলে ‘বই যথেষ্ট পরিমাণে বিক্রি না হলে বইয়ের দাম কমাবো কি করে?’
‘কেন মশাই, সংখ্যার দিক দিয়ে দেখতে গেলে বাঙলা পৃথিবীর ছয় অথবা সাত নম্বরের ভাষা। এই ধরুন ফরাসি ভাষা। এ-ভাষায় বাঙলার তুলনায় ঢের কম লোক কথা কয়। অথচ যুদ্ধের পূর্বে বারো আনা, চৌদ্দ আনা, জোর পাঁচ সিকে দিয়ে যে-কোন ভাল বই কেনা যেত। আপনারা পারেন না কেন?’
‘আজ্ঞে, ফরাসি প্রকাশক নির্ভয়ে যে-কোন ভালো বই এক ঝট্কায় বিশ হাজার ছাপাতে পারে। আমাদের নাভিশ্বাস ওঠে দু’হাজার ছাপাতে গেলেই, বেশি ছাপিয়ে দেউলে হব নাকি?’
তাই এই অচ্ছেদ্য চক্র। বই সস্তা নয় বলে লোকে বই কেনে না, আর লোকে বই কেনে না বলে বই সস্তা করা যায় না।
এ চক্র ছিন্ন তো করতেই হবে। করবে কে? প্রকাশক না ক্রেতা? প্রকাশকের পক্ষে করা কঠিন, কারণ ঐ দিয়ে পেটের ভাত যোগাড় করে। সে বঁটুকিটা নিতে নারাজ। এক্সপেরিমেন্ট করতে নারাজ—দেউলে হওয়ার ভয়ে।
কিন্তু বই কিনে কেউ তো কখনো দেউলে হয় নি। বই কেনার বাজেট যদি আপনি তিনগুণও বাড়িয়ে দেন, তবু তো আপনার দেউলে হবার সম্ভাবনা নেই। মাঝখান থেকে আপনি ফ্রাঁসের মাছির মত অনেকগুলি চোখ পেয়ে যাবেন, রাসেলের মত এক গাদা নূতন ভুবন সৃষ্টি করে ফেলবেন।
মার্ক টুয়েনের লাইব্রেরিখানা নাকি দেখবার মত ছিল। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত বই, বই, শুধু বই। এমন কি কর্পেটের উপরও গাদা গাদা বই স্তূপীকৃত হয়ে পড়ে থাকত—পা ফেলা ভার। এক বন্ধু তাই মার্ক টুয়েনকে বললেন, ‘বইগুলো নষ্ট হচ্ছে; গোটা কয়েক শেলফ যোগাড় করছ না কেন?’
মার্ক টুয়েন খানিকক্ষণ মাথা নিচু করে ঘাড় চুলকে বললেন, ‘ভাই, বলছে ঠিকই।—কিন্তু লাইব্রেরিটা যে কায়দায় গড়ে তুলেছি, শেলফ তো আর সে কায়দায় যোগাড় করতে পারিনে। শেলফ তো আর বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার চাওয়া যায় না।’
শুধু মার্ক টুয়েনই না, দুনিয়ার অধিকাংশ লোকই লাইব্রেরি গড়ে তোলে কিছু বই কিনে: আর কিছু বই বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার করে ফেরৎ না দিয়ে। যে-মানুষ পরের জিনিস গলা কেটে ফেললেও ছোবে না। সেই লোকই দেখা যায় বইয়ের বেলা সর্বপ্রকার বিবেক-বিবর্জিত, তার কারণটা কি?
এক আরব পণ্ডিতের লেখাতে সমস্যাটার সমাধান পেলুম।
পণ্ডিত লিখেছেন, ‘ধনীরা বলে, পয়সা কামানো দুনিয়াতে সবচেয়ে কঠিন কর্ম। কিন্তু জ্ঞানীরা বলেন, না, জ্ঞানার্জন সবচেয়ে শক্ত কাজ। এখন প্রশ্ন, কার দাবিটা ঠিক, ধনীর না জ্ঞানীর? আমি নিজে জ্ঞানের সন্ধানে ফিরি, কাজেই আমার পক্ষে নিরপেক্ষ হওয়া কঠিন। তবে একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করেছি, সেইটো আমি বিচক্ষণ জনের চক্ষুগোচর করাতে চাই। ধনীর মেহন্নতের ফল হ’ল টাকা। সে ফল যদি কেউ জ্ঞানীর হাতে তুলে দেয়, তবে তিনি সেটা পরমানন্দে কাজে লাগান, এবং শুধু তাই নয়, অধিকাংশ সময়েই দেখা যায়, জ্ঞানীরা পয়সা পেলে খরচ করতে পারেন ধনীদের চেয়ে অনেক ভালো পথে, ঢের উত্তম পদ্ধতিতে। পক্ষাস্তরে জ্ঞানচর্চার ফল সঞ্চিত থাকে পুস্তকরাজিতে এবং সে ফল ধনীদের হাতে গায়ে পড়ে তুলে ধরলেও তারা তার ব্যবহার করতে জানে না-বই পড়তে পারে না।’
আরব পণ্ডিত তাই বক্তব্য শেষ করেছেন কিউ. ই. ডি দিয়ে ‘অতএব প্রমাণ হল জ্ঞানার্জন ধনার্জনের চেয়ে মহত্তর।’
তাই প্রকৃত মানুষ জ্ঞানের বাহন পুস্তক যোগাড় করার জন্য অকাতরে অর্থব্যয় করে। একমাত্র বাঙলা দেশ ছাড়া।
সেদিন তাই নিয়ে শোকপ্রকাশ করাতে আমার জনৈক বন্ধু একটি গল্প বললেন। এক ড্রইংরুম-বিহারিণী গিয়েছেন বাজারে স্বামীর জন্মদিনের জন্য সওগাত কিনতে। দোকানদার এটা দেখায়, সেটা শোকায়, এটা নাড়ে, সেটা কাড়ে, কিন্তু গরবিনী ধনীর (উভয়ার্থে) কিছুই আর মনঃপূত হয় না। সব কিছুই তাঁর স্বামীর ভাণ্ডারে রয়েছে। শেষটায় দোকানদার নিরাশ হয়ে বললে, ‘তবে একখানা ভাল বই দিলে হয় না?’ গরবিনী নাসিকা কুঞ্চিত করে বললেন, ‘সেও তো ওঁর একখানা রয়েছে।’
যেমন স্ত্রী তেমনি স্বামী। একখানা বইই তাদের পক্ষে যথেষ্ট।
অথচ এই বই জিনিসটার প্রকৃত সম্মান করতে জানে ফ্রান্স। কাউকে মোক্ষম মারাত্মক অপমান করতে হলেও তারা ঐ জিনিস দিয়েই করে। মনে করুন আপনার সবচেয়ে ভক্তিভালবাসা দেশের জন্য। তাই যদি কেউ আপনাকে ডাহা বেইজজৎ করতে চায়; তবে সে অপমান করবে। আপনার দেশকে। নিজের অপমান আপনি হয়ত মনে মনে পঞ্চাশ গুণে নিয়ে সয়ে যাবেন, কিন্তু দেশের অপমান আপনাকে দংশন করবে বহুদিন ধরে।
আঁদ্রে জিদে’র মেলা বন্ধুবান্ধব ছিলেন—অধিকাংশই নামকরা লেখক। জিদ রুশিয়া থেকে ফিরে এসে সোভিয়েট রাজ্যের বিরুদ্ধে একখানা প্রাণঘাতী কেতাব ছাড়েন। প্যারিসের স্তালিনীয়ারা তখন লাগল জিদের পিছনে—গালিগালাজ কটুকাটব্য করে জিদের প্রাণ অতিষ্ঠা করে তুললো। কিন্তু আশ্চর্য, জিদের লেখক বন্ধুদের অধিকাংশই চুপ করে সব কিছু শুনে গেলেন, জিদের হয়ে লড়লেন না। জিদের জিগরে জোর চোট লাগল-তিনি স্থির করলেন, এদের একটা শিক্ষা দিতে হবে।
কাগজে বিজ্ঞাপন বেরল। জিদ তাঁর লাইব্রেরিখানা নিলামে বেচে দেবেন বলে মনস্থির করেছেন। প্যারিস খবর শুনে প্রথমটায় মূর্ছা গেল, কিন্তু সম্বিতে ফেরা মাত্রই মুক্তকচ্ছ হয়ে ছুটলো নিলাম-খানার দিকে।
সেখানে গিয়ে অবস্থা দেখে সকলেরই চক্ষুস্থির।
যে-সব লেখক জিদের হয়ে লড়েন নি, তাদের যে-সব বই তারা জিদকে স্বাক্ষর সহ উপহার দিয়েছিলেন, জিদ মাত্র সেগুলো নিলামে চড়িয়েছেন। জিদ শুধু জঞ্জালই বেচে ফেলছেন।
প্যারিসের লোক তখন যে অট্টহাস্য ছেড়েছিল, সেটা আমি ভূমধ্যসাগরের মধ্যিখানে জাহাজে বসে শুনতে পেয়েছিলুম—কারণ খবরটার গুরুত্ব বিবেচনা করে রয়টার সেটা বেতারে ছড়িয়েছিলেন-জাহাজের টাইপ-করা একশো লাইনি দৈনিক কাগজ সেটা সাড়ম্বরে প্রকাশ করেছিল।
অপমানিত লেখকরা ডবল তিন ডবল দামে আপন আপনি বই লোক পাঠিয়ে তড়িঘড়ি কিনিয়ে নিয়েছিলেন-যত কম লোকে কেনা-কাটার খবর জানতে পারে ততই মঙ্গল। (বাঙলা দেশে নাকি একবার এরকম টিকিট বিক্রি হয়েছিল!)
শুনতে পাই, এঁরা নাকি জিদকে কখনো ক্ষমা করেন নি।
(মূল লেখার বানানরীতি অনুসরণ করা হলো)
Book Morning
Books
Reviews
আলোচনা
বইমেলা
তিমিরযাত্রা পড়তে পড়তে রাগে গলা শুকিয়ে আসছিল, মুখের মধ্যে একধরনের তেঁতোভাব। একশ ১৪৫ পাতার উপন্যাসটি পড়তে পড়তে কয়েকবার নামিয়ে রাখতে হয়ছে। উপন্যাসটির লেখক মোজাফ্ফর হোসেন মনে হলো আমাদের সাহিত্যজগতে একটা গ্রেনেড ছুঁড়ে মারলেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সমাজব্যবস্থার সবগুলো কালো অধ্যায়ে সার্চলাইটের আলো ফেলেছেন। মিশেল ফুকোর একটা কথা আছে, "[Book]...I would like them to self-destruct after use, like fireworks". তিমিরযাত্রা তেমনই একটা উপন্যাস যা পড়ে আপনার খুব রাগ হবে, মনে হবে আপনার বুকের মধ্যে যেকোন সময় গ্রেনেডটা ফেটে যাবে।
আমার মতো অনেকে হয়ত সিনেমা দেখার সময় মনে প্রাণে চান যে অমুক দৃশটা যেন না হয়, অনেকে আমরা চোখ ঢাকি, আবার দু-আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে দেখার চেষ্টাও করি যে আসলেই হলো কি না। তিমিরযাত্রা উপন্যাস পড়ার সময় আমি চিৎকার করে বলেছি মিলি যাসনে ওঘরে। সুরুজ সব ফুটোয় চোখ রাখতে নেই। সত্য সবসময় সুখকর নয়, তবু মোজাফ্ফর সার্জনদের মতো জোর করে সত্যটি আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরেছে। আমরা দেখতে-শুনতে না চাইলেও আমরা বাধ্য হই, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বা শুধুমাত্র মানুষ হিসেবে আমাদের ভাবতে বাধ্য করবে যে এমন বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম?
আমার ইচ্ছে করছে সম্পূর্ণ উপন্যাসটির চ্যাপ্টার টু চ্যাপ্টার তুলে এনে আলোচনা করি কিন্তু তাতে পাঠক মূল গল্পটি উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হবেন। উপন্যাসটি শুরু হয়েছে একজন প্রবীণ বাবা অন্ধকারে সময় কাটান সেই দৃশ্য দিয়ে। বৃদ্ধ একজন মানুষ এক আধটু অন্ধকারে থাকতে চাইবেন সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু ঘরের বাল্বগুলো খুলে রেখে তিমির যাপন এটা অস্বাভাবিক। এটুকু পড়েই পাঠকের কৌতুহল জাগবে এবং পাঠক পাতা উল্টাতে বাধ্য। এই যে পাঠক হিসেবে আমাকে পাতা উল্টানোয় বাধ্য করা সেটি সকল লেখক পারেন না।
যৌনতা এই গল্পে এক নতুনভাবে আবর্তিত হয়েছে, এমনটা খুব চোখে পড়ে না। এই গল্পের যৌনতা অস্বস্তিদায়ক, কিন্তু নির্মম সত্য। মুক্তিযদ্ধের ইতিহাস থেকে অর্জিত নৈতিক চিন্তার নানা বিষয়ের সঙ্গে সমসাময়িক কালের স্বাস্থ্য, বিবাহ সম্পর্ক, সমকামিতা এসব বিষয়ের মধ্যদিয়ে মোজাফ্ফর একটি প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা চালিয়েছেন নানান চরিত্রের মাধ্যমে। আমাদের প্রজন্ম এসব বিষয়ে কি ভাবছে সেটা বোঝা যায় তিমিরযাত্রায়। আমাকে যদি কেউ বলে তিমিরযাত্রা কেমন উপন্যাস তাহলে বলবো যদি না পড়ে থাকেন তবে ঠকবেন। উপন্যাসের প্রথম ও শেষ অন্বিষ্ট নায়ক সুরুজ, তার জীবন। সেই সুরুজ আমি আপনি যে কেউ হতে পারে। তিমিরযাত্রা মোজাফ্ফরের স্বরগ্রামে প্রকাশিত তাঁর জীবনবোধ আর তাঁর স্বদেশ, সমাজ ও সমকাল চিন্তা।
আমি তিমিরযাত্রার সমালোচনা বা আলোচনায় বসিনি, আমি কোন আলোচক নই। ভাষা, বাক্যগঠন, উপন্যাসের ব্যাকরণ এসব নিয়ে আমি ভাবি নি। আমার ভাবনা গল্পে। গল্পটি আমার কেমন লেগেছে সেটিই বলার চেষ্টা করছি মাত্র। উপন্যাসটির কিছু ব্যাপার আমার ভালো লাগেনি, খটকা লেগেছে, বিরক্ত হয়েছি, এবার এমন কিছু কথা বলতে চাই।
উপন্যাসটিতে একজন ডাক্তার চরিত্র আছে, তাঁকে ডাক্তারের চাইতে দার্শনিক মনে হয়েছে বেশি, একজন হিজড়ে চরিত্র আছে তাঁর মনস্তাত্বিক ব্যাপারটা বিস্তারিত হয় নি। নায়ক সুরুজ একজন ঔপন্যাসিক। সে কানাডায় থাকে এবং মার্গারেট এটউডের প্রসঙ্গটি মনে হয়েছে সুরুজের না, মোজাফ্ফরের নিজের। দেশভাগ, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, তার পরবর্তি রাজাকারদের উত্থান, অভিজিৎ রায়, ব্লগার হত্যা, বাউল, মাজার, কিছু মানুষের পাকিস্তান প্রেম, এমনকি মোদীও এসেছে। এই যে এত এত বিষয় এগুলো ডেভেলোপের জন্য লেখক সময় দেন নি। প্রথম উপন্যাস হিসেবে মোজাফ্ফরের এত তাড়াহুড়ো কেন?
আসলে এত কম পাতায় সেই সুযোগও নেই। আমার মনে হয় এত কিছু না আসলেও পারতো। চরিত্রগুলো ডেভেলপ করার সময়টুকু দেওয়া হয় নি। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র গুলো মনে হয়েছে চরিত্র নিজে নয় মোজাফফর কথা বলছে। কিছু প্যারাগ্রাফ পড়ে মনে হয়েছে প্রবন্ধ পড়ছি, উপন্যাস নয়। মোজাফফর কি ভেবেছে যে পাঠক হয়ত গল্পটির মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারটি বুঝতে পারবে না। তাই কি এত ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ল। মোজাফফর পাঠককে ভাবতে দেয়নি সব খোলাসা করে দিয়েছে। এত ব্যাখ্যার প্রয়োজন ছিল না। পাঠককেও কিছু স্বাধীনতা দিতে হয়।
আমি মোজাফ্ফরের লেখা তাঁর লেখালেখির শুরু থেকেই পড়ছি, ভালোলাগে এবং সকলকে পড়তেও বলি। আমার বিশ্বাস মোজাফ্ফর এগুলোকে বর্ধনশীলভাবেই দেখবে। উপন্যাসের মূল সুরটি ছিল সেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটির উত্তর খোঁজা, একজন মুক্তিযোদ্ধা কেন যুদ্ধে গিয়েছিল? তার উত্তর নেই, এমন প্রশ্নের উত্তর থাকে না।
তিমিরযাত্রা মোজাফ্ফরের স্বরগ্রামে প্রকাশিত তাঁর জীবনবোধ আর তাঁর স্বদেশ, সমাজ ও সমকাল চিন্তা।
by rit.oneSaturday, March 7, 2020
তিমিরযাত্রা পড়তে পড়তে রাগে গলা শুকিয়ে আসছিল, মুখের মধ্যে একধরনের তেঁতোভাব। একশ ১৪৫ পাতার উপন্যাসটি পড়তে পড়তে কয়েকবার নামিয়ে রাখতে হয়ছে। উপন্যাসটির লেখক মোজাফ্ফর হোসেন মনে হলো আমাদের সাহিত্যজগতে একটা গ্রেনেড ছুঁড়ে মারলেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সমাজব্যবস্থার সবগুলো কালো অধ্যায়ে সার্চলাইটের আলো ফেলেছেন। মিশেল ফুকোর একটা কথা আছে, "[Book]...I would like them to self-destruct after use, like fireworks". তিমিরযাত্রা তেমনই একটা উপন্যাস যা পড়ে আপনার খুব রাগ হবে, মনে হবে আপনার বুকের মধ্যে যেকোন সময় গ্রেনেডটা ফেটে যাবে।
আমার মতো অনেকে হয়ত সিনেমা দেখার সময় মনে প্রাণে চান যে অমুক দৃশটা যেন না হয়, অনেকে আমরা চোখ ঢাকি, আবার দু-আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে দেখার চেষ্টাও করি যে আসলেই হলো কি না। তিমিরযাত্রা উপন্যাস পড়ার সময় আমি চিৎকার করে বলেছি মিলি যাসনে ওঘরে। সুরুজ সব ফুটোয় চোখ রাখতে নেই। সত্য সবসময় সুখকর নয়, তবু মোজাফ্ফর সার্জনদের মতো জোর করে সত্যটি আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরেছে। আমরা দেখতে-শুনতে না চাইলেও আমরা বাধ্য হই, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বা শুধুমাত্র মানুষ হিসেবে আমাদের ভাবতে বাধ্য করবে যে এমন বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম?
আমার ইচ্ছে করছে সম্পূর্ণ উপন্যাসটির চ্যাপ্টার টু চ্যাপ্টার তুলে এনে আলোচনা করি কিন্তু তাতে পাঠক মূল গল্পটি উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হবেন। উপন্যাসটি শুরু হয়েছে একজন প্রবীণ বাবা অন্ধকারে সময় কাটান সেই দৃশ্য দিয়ে। বৃদ্ধ একজন মানুষ এক আধটু অন্ধকারে থাকতে চাইবেন সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু ঘরের বাল্বগুলো খুলে রেখে তিমির যাপন এটা অস্বাভাবিক। এটুকু পড়েই পাঠকের কৌতুহল জাগবে এবং পাঠক পাতা উল্টাতে বাধ্য। এই যে পাঠক হিসেবে আমাকে পাতা উল্টানোয় বাধ্য করা সেটি সকল লেখক পারেন না।
যৌনতা এই গল্পে এক নতুনভাবে আবর্তিত হয়েছে, এমনটা খুব চোখে পড়ে না। এই গল্পের যৌনতা অস্বস্তিদায়ক, কিন্তু নির্মম সত্য। মুক্তিযদ্ধের ইতিহাস থেকে অর্জিত নৈতিক চিন্তার নানা বিষয়ের সঙ্গে সমসাময়িক কালের স্বাস্থ্য, বিবাহ সম্পর্ক, সমকামিতা এসব বিষয়ের মধ্যদিয়ে মোজাফ্ফর একটি প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা চালিয়েছেন নানান চরিত্রের মাধ্যমে। আমাদের প্রজন্ম এসব বিষয়ে কি ভাবছে সেটা বোঝা যায় তিমিরযাত্রায়। আমাকে যদি কেউ বলে তিমিরযাত্রা কেমন উপন্যাস তাহলে বলবো যদি না পড়ে থাকেন তবে ঠকবেন। উপন্যাসের প্রথম ও শেষ অন্বিষ্ট নায়ক সুরুজ, তার জীবন। সেই সুরুজ আমি আপনি যে কেউ হতে পারে। তিমিরযাত্রা মোজাফ্ফরের স্বরগ্রামে প্রকাশিত তাঁর জীবনবোধ আর তাঁর স্বদেশ, সমাজ ও সমকাল চিন্তা।
আমি তিমিরযাত্রার সমালোচনা বা আলোচনায় বসিনি, আমি কোন আলোচক নই। ভাষা, বাক্যগঠন, উপন্যাসের ব্যাকরণ এসব নিয়ে আমি ভাবি নি। আমার ভাবনা গল্পে। গল্পটি আমার কেমন লেগেছে সেটিই বলার চেষ্টা করছি মাত্র। উপন্যাসটির কিছু ব্যাপার আমার ভালো লাগেনি, খটকা লেগেছে, বিরক্ত হয়েছি, এবার এমন কিছু কথা বলতে চাই।
উপন্যাসটিতে একজন ডাক্তার চরিত্র আছে, তাঁকে ডাক্তারের চাইতে দার্শনিক মনে হয়েছে বেশি, একজন হিজড়ে চরিত্র আছে তাঁর মনস্তাত্বিক ব্যাপারটা বিস্তারিত হয় নি। নায়ক সুরুজ একজন ঔপন্যাসিক। সে কানাডায় থাকে এবং মার্গারেট এটউডের প্রসঙ্গটি মনে হয়েছে সুরুজের না, মোজাফ্ফরের নিজের। দেশভাগ, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, তার পরবর্তি রাজাকারদের উত্থান, অভিজিৎ রায়, ব্লগার হত্যা, বাউল, মাজার, কিছু মানুষের পাকিস্তান প্রেম, এমনকি মোদীও এসেছে। এই যে এত এত বিষয় এগুলো ডেভেলোপের জন্য লেখক সময় দেন নি। প্রথম উপন্যাস হিসেবে মোজাফ্ফরের এত তাড়াহুড়ো কেন?
আসলে এত কম পাতায় সেই সুযোগও নেই। আমার মনে হয় এত কিছু না আসলেও পারতো। চরিত্রগুলো ডেভেলপ করার সময়টুকু দেওয়া হয় নি। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র গুলো মনে হয়েছে চরিত্র নিজে নয় মোজাফফর কথা বলছে। কিছু প্যারাগ্রাফ পড়ে মনে হয়েছে প্রবন্ধ পড়ছি, উপন্যাস নয়। মোজাফফর কি ভেবেছে যে পাঠক হয়ত গল্পটির মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারটি বুঝতে পারবে না। তাই কি এত ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ল। মোজাফফর পাঠককে ভাবতে দেয়নি সব খোলাসা করে দিয়েছে। এত ব্যাখ্যার প্রয়োজন ছিল না। পাঠককেও কিছু স্বাধীনতা দিতে হয়।
আমি মোজাফ্ফরের লেখা তাঁর লেখালেখির শুরু থেকেই পড়ছি, ভালোলাগে এবং সকলকে পড়তেও বলি। আমার বিশ্বাস মোজাফ্ফর এগুলোকে বর্ধনশীলভাবেই দেখবে। উপন্যাসের মূল সুরটি ছিল সেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটির উত্তর খোঁজা, একজন মুক্তিযোদ্ধা কেন যুদ্ধে গিয়েছিল? তার উত্তর নেই, এমন প্রশ্নের উত্তর থাকে না।
Subscribe to:
Posts (Atom)