
বছর দুয়েক পরে রুদ্র ভর্তি হন মোংলার সেন্ট পলস হাইস্কুলে। সেখানে প্রতিটি আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় রুদ্র প্রথম স্থান অধিকার করেন। রুদ্রের বয়স যখন এগারোয় পড়েছে, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়ে পাঠ্যবইয়ের সমস্ত কবিতাই রুদ্রর মুখস্ত হয়ে যায়। সে-সময় বুদ্ধদেব বসুর কবিতার অনুকরণে একটি কবিতা রচনা করেন। সেই ১৯৬৬ সালে রুদ্রের কবিতা রচনার হাতেখড়ি। কবিতাটি অবশ্য আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। এরপর রুদ্র নিয়মিত কবিতা লিখতেন। কবিতার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলা এবং নাটক করার দিকেও রুদ্ৰ ঝুঁকেছিলেন সেই কিশোর বয়সেই। কিন্তু খেলাধুলার প্রতি বাবার নিষেধাজ্ঞার কারণে রুদ্র আর খেলার দিকে মন দেন নি।
১৯৬৮ সালে রুদ্র তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন, তখন মামাতো ভাইদের সঙ্গে নিয়ে নানির ট্রাংক থেকে কিছু টাকা চুরি করেন। সকলে বলেছিল সেই টাকা দিয়ে সিনেমা দেখতে যাবে। কিন্তু রুদ্রের সিদ্ধান্তে সেই টাকায় বেশকিছু বই কিনে একটি লাইবেরি গঠন করা হয়। এর নাম দেয়া হয় 'বনফুল লাইব্রেরি’। ১৯৭০ সালে রুদ্র যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়েন, তখন মামাতো ভাইবোনদের সঙ্গে নিয়ে অর্থাৎ বনফুল লাইব্রেরির সদস্যদের নিয়ে একটি নাটক মঞ্চায়ন করেন। নাটকের নাম ‘কালো টাইয়ের ফাঁস’। এ-নাটকে রুদ্র ছাড়াও অভিনয় করেন মোঃ সাইফুল্লাহ, সাব্বির হাসান রুমি, মাহমুদ হাসান ছোটমনি, আছিয়া খাতুন ও আবু জগলুল মঞ্জু। ইতোমধ্যে রুদ্র নিজের লেখা কবিতায় একটি পুরো খাতা ভরে ফেলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাড়ির অনেক কিছুর সঙ্গে সেই খাতাটি পুড়ে যায়।
রুদ্রের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে দৈনিক ‘আজাদ' পত্রিকায়। রুদ্র তখন ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুলে দশম শ্রেণির ছাত্র। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কবিতাটিতে কবির নাম ছাপা হয় নি। কবিতার নাম ছিল ‘আমি ঈশ্বর আমি শয়তান’। প্রথম লেখায় স্বাভাবিকভাবেই অপরিপক্কতার ছাপ রয়েছে। কিন্তু তাঁর জীবনদর্শনের ছায়াপাত ঘটেছে প্রথম কবিতায়ই। রুদ্র এটিকে তার কোনো বইয়ে স্থান না দিলেও প্রথম প্রকাশিত রচনা হিসেবে এর মূল্য রয়েছে।
আমি ঈশ্বর আমি শয়তান
আমায় যদি তুমি বলো ঈশ্বর,
আমি বলব, হ্যাঁ আমি তাই।
আমায় যদি বলো পাপী শয়তান,
আমি বলব, হ্যাঁ আমি তাই-ই।
— কারণ আমার মাঝে যাদের অস্তিত্ব
তার একজন ঈশ্বর; অপরজন শয়তান।
তাই যখন শয়তানের ছবিটি ভাসে
আমার মানব অবয়বে - তখন আমি পাপী
আর যখন সত্যের পূর্ণতায় আমি -
মানবের কল্যানে আমার কর্ম
ঠিক তখনই আমি ঈশ্বর; কারন
সত্য, পুন্য আর মানবতাই ঈশ্বর।
সংগ্রহিত।
No comments
Post a Comment