
ফাল্গুন-চৈত্রের প্রকৃতি যে রূপ নিয়ে উপস্থিত হয় তার প্রভাব আমাদের মনকেও দখল করে। মনের মঞ্জরী মঞ্জীর হয়ে ধ্বনিত হতে থাকে। নতুন প্ৰাণনে আমরাও জেগে উঠি। মানব-মানবী আমরা প্রকৃতির মতন অবগাহন করতে চাই মনের গহীনে। মনের বিচিত্র সব গতিকে ধরে রাখতে চায় জীবনের গল্পকারেরা।
নস্টালজিক অনুভব প্রেমের গল্পের উদ্ভবে অনেকখানি প্রেরণার কাজ করে থাকে হয়তো। তেমনি গল্পকারদের নিজস্ব অনুসন্ধানী দৃষ্টি যোগ করে চলে মানুষের নতুন নতুন অনুভব। 'দৃষ্টিদান’ নামে রবীন্দ্রনাথের একটি গল্প আছে। "দৃষ্টিদানের সিদ্ধান্ত বলতে যা বুঝি, সে হচ্ছে এই যে, যে মেয়েকে ভালবাসো, মনে রেখে সে দেবী নয়, সে মানবী। নিজের দৃষ্টি যে সময়ে স্বামীকে দান করল, অপরের সঙ্গে স্বামীর শুভদৃষ্টি বিনিময়ের বাধা ঘটালো সে-ই। প্রেমের জন্যই সে দান করেছিল, প্রেমের জন্যই সে স্বার্থপর। সে দেবী নয়, মানবী। চেখভ, বোধহয় ও-গল্পের নাম রাখতেন ‘দেবী না মানবী?' অথবা ‘পরিচয়' বা ঐ রকম অন্য একটা কিছু।"- এই কথাগুলো বলেছেন কবি ও সমালোচক হরপ্রসাদ মিত্র।
গল্পকার রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যে এলে অবাক হয়ে যেতে হয় তার প্রেমের গল্পের সংখ্যা দেখে। সংখ্যা ও বৈচিত্র্যে কথাসাহিত্যের এই শাখাকে সমৃদ্ধই করেননি প্রেমকে একটি বিশেষ মর্যাদায় অভিষিক্তও করেছেন তিনি। অন্তর্দ্বন্দ্বের শাখা-প্ৰশাখার জটিলতার মধ্য দিয়েই তিনি আবিষ্কার করে চলেছেন তাঁর যুগের নতুন মানুষদের। আবিষ্কারকের এই দৃষ্টিভঙ্গিই তাঁকে দিলো ছােটগল্প লেখার প্রণোদন ।
মনে রাখা দরকার যে শুধু মানুষটি নয়, ভিতরের মানুষকে রূপদান করাও গল্পকারের অম্বিষ্ট। রবীন্দ্রনাথের কথা বলা হলো বলে একালের গল্পকারেরা যেন মনে না করেন যে রবীন্দ্রনাথে বৃত্তাবদ্ধ থাকার পক্ষে আমি। তিনি প্রেমের গল্পের ক্ষেত্রেও সফল পথিকৃৎ। জীবনের সব গ্রন্থি খুলে নতুনের অভিসারে সাহসী পথিক রবীন্দ্রনাথের মতন আর কে ? তাই তাঁর কথা এসে পড়ে। আমি বিশ্বাস করি জীবনের নতুন নতুন উদ্ভাসন। আমাদের কালের গল্পকারেরা এই সাহসী অভিযাত্রায় উন্মোচন করুন প্রেমের তথা জীবনের অনুদ্ঘাটিত দিকগুলো। যুগযন্ত্রণা এবং নতুন জীবনবোধ দিয়ে মানুষের যে অন্তর্লোক তৈরি হচ্ছে তার শিল্পরূপ আমি দেখতে চাই। দেখতে চাই প্রেমিকপ্রেমিকার আর্তি ও সুখদ চিত্র। আমি চাই সার্থক প্রেমের গল্প লিখে জীবনের গ্লানি মুক্ত করবেন নতুন সব জীবনশিল্পী।
No comments
Post a Comment