‘মদ’। শুনলে বিশ বছর আগেও বাঙালি নাক কুঁচকে তাকাত। এখনও নাক কুঁচকেই তাকায়। ‘মদ’। দেখলে আগেও বাঙালির কপালে ভাজ পড়ত। এখনও পড়ে। তফাত নেই। আবার, তফাত আছেও। আগে, মদ’ অর্থে যে নিষিদ্ধ বস্তু বোঝাত, সময়ের দাঁড় আস্তে আস্তে সেই ঘেন্নার পানা সাফ করে দিয়েছে। ‘মদ” কথাটায় এখনকার বাঙালির নাক কুচকানোর কারণ, সে বুঝতে চায় তার স্টেটাস ও চায়েসের সঙ্গে পরিবেশিত পানীয় ‘ম্যাচ’ করছে কি না। কী ব্র্যান্ড, কোন ধরনের গ্লাসে, কী জাতীয় অনুপান-সহ গ্রহণ করা উচিত, সে আক্কেল দাঁত বাঙালির গজিয়েছে বইকি। কপালে যে ভাজ বাঙালি হয়তো বা ক্যালোরি ইনটেকের অঙ্কটা তলে তলে মেপে নিতে চায়। হুড়মুড়িয়ে এত যে তরল এনার্জি তরতরিয়ে পেটে চালান হল, আগামী কাল সেসব তো ঝরাতে হবে। রোজ যদি জিমে আধঘণ্টা ওয়ার্কআউট করি তো আগামী কাল বাড়তি আরও পনেরো মিনিট দিতে হবে। কুন্ঠা নেই, কুচকাওয়াজ আছে। শঙ্কা নেই, শাবাশি আছে। আর আছে দ্বিধাহীন আত্মঘোষণা: মদ খাই, কারণ মদ খেতে ভালবাসি।
মদ ও মদ্যপায়ীর প্রতি চেয়ে দেখার ধরন এই যে এতখানি বদলে গেল সেজন্য ‘বার’ এর অবদান অস্বীকার করা যাবে না। হিন্দি সিনেমাকেও কদর দিতে হবে। নয়ের দশকের শেষে যখন "সত্যা’ বা “সরফরোশ’-এর মতো মারকাটারি হিন্দি সিনেমা বাজারে আসছে, তখনও মুক্ত অর্থনীতির জোয়ার দশতলা বাড়ির উচ্চতায় উঠে সহসা ঝাঁপ দিয়ে পড়েনি মধ্যবিত্ত ভারতীয় জীবনে। ইন ফ্যাক্ট, তখনও ‘মধ্যবিত্ত’ বলে একটা শ্রেণি বিরাজ করত মহানগর ও সংলগ্ন মানেই অপরাধীদের আবাসস্থল। টাকা উড়ছে। মেয়েরা নাচছে। 'গ্লাসনস্ত’ বলে গ্লাসে গ্লাস ঠুকে অপরাধ জগতের ইয়াররা খুশি শেয়ার করছে। প্রতিটি টেবিলে, প্রতিটি চুমুকে চলকে যাচ্ছে যৌবনের উল্লাস। দর্শক অবশ্য জানে নেশা ছুটতে বেশি সময় লাগবে না। এই বুঝি এল তেড়ে বন্দুক হাতে অন্য গ্যাংয়ের ছেলেরা। নতুবা, পুলিশ। যে-অপরাধীর সন্ধান কোথাও মিলছে না, দর্শক জানে, ইনফর্মর ঠিক এসিপি-র কানে পৌছে দেবে খবর— ওই ব্যাটা রোজ সন্ধেয় কোন বারে টু মারে।
এখন যে বারে-বারে অপরাধীরা যায় না তা নয়। তবে তার চেয়েও সংখ্যায় অনেক বেশি যায় সাধারণ মানুষ। স্ট্রেস ঝেড়ে সেলিব্রেট করতে, এমনকী, চিরকালের ব্যথাতুর প্রেমের প্রতীক ‘দেবদাস’ হয়েও যায়। ভারতীয় জীবনযাত্রা মুক্ত অর্থনীতির ত্বরণ গা পেতে বরণ করেছে। “বার কাম রেস্তোরা”-য় ফ্যামিলি নিয়ে সময় কাটানোর বন্দোবস্ত যথাসম্ভব নিরুপদ্রব করার চল এসেছে। হিন্দি সিনেমা দেখাচ্ছে- ভ্রুজের বারে বাবা ও ছেলে নিঃসংকোচে ঠোঁট ছোয়াচ্ছে হার্ড ড্রিংকে। 'বার’ নিয়ে আর বাগাড়ম্বর নেই। 'কুমির তোর জলকে নেমেছি’ নেই। আলো ও আঁধার নিয়ে এ জীবনও থাকবে- মেনে নেওয়া মাথা নেড়ে।
(সাপ্তাহিক রোববার থেকে)
মদ ও মদ্যপায়ীর প্রতি চেয়ে দেখার ধরন এই যে এতখানি বদলে গেল সেজন্য ‘বার’ এর অবদান অস্বীকার করা যাবে না। হিন্দি সিনেমাকেও কদর দিতে হবে। নয়ের দশকের শেষে যখন "সত্যা’ বা “সরফরোশ’-এর মতো মারকাটারি হিন্দি সিনেমা বাজারে আসছে, তখনও মুক্ত অর্থনীতির জোয়ার দশতলা বাড়ির উচ্চতায় উঠে সহসা ঝাঁপ দিয়ে পড়েনি মধ্যবিত্ত ভারতীয় জীবনে। ইন ফ্যাক্ট, তখনও ‘মধ্যবিত্ত’ বলে একটা শ্রেণি বিরাজ করত মহানগর ও সংলগ্ন মানেই অপরাধীদের আবাসস্থল। টাকা উড়ছে। মেয়েরা নাচছে। 'গ্লাসনস্ত’ বলে গ্লাসে গ্লাস ঠুকে অপরাধ জগতের ইয়াররা খুশি শেয়ার করছে। প্রতিটি টেবিলে, প্রতিটি চুমুকে চলকে যাচ্ছে যৌবনের উল্লাস। দর্শক অবশ্য জানে নেশা ছুটতে বেশি সময় লাগবে না। এই বুঝি এল তেড়ে বন্দুক হাতে অন্য গ্যাংয়ের ছেলেরা। নতুবা, পুলিশ। যে-অপরাধীর সন্ধান কোথাও মিলছে না, দর্শক জানে, ইনফর্মর ঠিক এসিপি-র কানে পৌছে দেবে খবর— ওই ব্যাটা রোজ সন্ধেয় কোন বারে টু মারে।
এখন যে বারে-বারে অপরাধীরা যায় না তা নয়। তবে তার চেয়েও সংখ্যায় অনেক বেশি যায় সাধারণ মানুষ। স্ট্রেস ঝেড়ে সেলিব্রেট করতে, এমনকী, চিরকালের ব্যথাতুর প্রেমের প্রতীক ‘দেবদাস’ হয়েও যায়। ভারতীয় জীবনযাত্রা মুক্ত অর্থনীতির ত্বরণ গা পেতে বরণ করেছে। “বার কাম রেস্তোরা”-য় ফ্যামিলি নিয়ে সময় কাটানোর বন্দোবস্ত যথাসম্ভব নিরুপদ্রব করার চল এসেছে। হিন্দি সিনেমা দেখাচ্ছে- ভ্রুজের বারে বাবা ও ছেলে নিঃসংকোচে ঠোঁট ছোয়াচ্ছে হার্ড ড্রিংকে। 'বার’ নিয়ে আর বাগাড়ম্বর নেই। 'কুমির তোর জলকে নেমেছি’ নেই। আলো ও আঁধার নিয়ে এ জীবনও থাকবে- মেনে নেওয়া মাথা নেড়ে।
(সাপ্তাহিক রোববার থেকে)
No comments
Post a Comment