বইয়ের কথাই যে ধ্রুবসত্য নয়, বইও যে কোনো-না কোনো মানুষের কীর্তি, এইসব সাদামাঠা কথা খেয়াল রাখি না বলে কত না বিড়ম্বনায় পড়তে হয় আমাদের৷ তাই রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাপ্রকল্পে বইয়ে যা লেখা আছে শুধু তা শিখিয়ে দেওয়াই একমাত্র কাজ নয়, বইটা কীভাবে লেখা হয়েছিল এটা যাতে শিক্ষার্থীরা নিজেরা হৃদয়ংগম করতে পারে সেদিকে নজর দেওয়াই প্রকৃত কাজ৷ ১৩১৩-র আর-একটি প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ লিখছেন; -
'আর্যরা মধ্য এশিয়া হইতে ভারতে আসিয়াছেন’, ‘খৃস্টজন্মের দুই হাজার বৎসর পূর্বে বেদরচনা হইয়াছে’, এ-সকল কথা আমরা বই হইতে পড়িয়াছি৷ বইয়ের অক্ষরগুলো কাটকুট-হীন নির্বিকার, তাহারা শিশুবয়সে আমাদের উপরে সম্মোহন প্রয়োগ করে; তাই আমাদের কাছে আজ এ-সমস্ত কথা একেবারে দৈববাণীর মতো৷ ছেলেদের প্রথম হইতেই জানিতে হইবে, এই-সকল আনুমানিক কথা কতকগুলা যুক্তির উপর নির্ভর করিতেছে৷ সেই-সকল যুক্তির মূল উপকরণগুলি যথাসম্ভব তাহাদের সম্মুখে ধরিয়া তাহাদের নিজেদের অনুমানশক্তির উদ্রেক করিতে হইবে৷ বইগুলা যে কী করিয়া তৈরি হইতে থাকে তাহা প্রথম হইতেই অল্পে-অল্পে ক্রমে-ক্রমে তাহারা নিজেদের মনের মধ্যে অনুভব করিতে থাকুক তাহা হইলেই বইয়ের যথার্থ ফল তাহারা পাইবে, অথচ তাহারা অন্ধ শাসন হইতে মুক্তিলাভ করিতে পারিবে এবং নিজের স্বাধীন উদ্যমের দ্বারা জ্ঞানলাভ করিবার যে স্বাভাবিক মানসিক শক্তি তাহা ঘাড়ের-উপরে-বাহির-হইতে-বোঝা-চাপানো বিদ্যার দ্বারা আচ্ছন্ন ও অভিভূত হইবে না,বইগুলোর উপরে মনের কর্তৃত্ব অক্ষুণ্ণ থাকিবে৷
(‘আবরণ’, ১৩১৩, পূর্বোক্ত, পৃ ৩৪৭).
সত্যিই কি, বই কোন ধ্রুবসত্যের কথা বলে না? নাকি মহাবিশ্বে আসলে ধ্রুবসত্য বলে কিছু নেই। কিন্তু যেহেতু রবীন্দ্রনাথ ঠকুর বলেছেন সুতরাং "বই কোন ধ্রুবসত্যের কথা বলে না।"ই ঠিক। তাতে সন্দেহ প্রকাশ করা ঠিক না।
ReplyDelete