“ঢাকা মানেই আমাদের কাছে প্রথমেই বেলাল চৌধুরী”
রিটন খান
রিটন খান
২০১৭ সালে বেলাল চৌধুরীর বই নিরুদ্দেশ হাওয়ায় হাওয়ায়-এর ডিজিটাল সংস্করণের জন্য তাঁর অনুমতি নিতেই ঢাকায় গিয়েছিলাম। জানতাম উনি প্রায় অসুস্থ থাকেন, তাই বিমানবন্দরে নেমেই তাঁর ছেলে প্রতীকের সাথে যোগাযোগ করে খোঁজ নিলাম কবি কেমন আছেন। ভাগ্যিস কবি সেদিন একটু সুস্থ ছিলেন।
দেরি না করে সেদিনই সন্ধ্যার পর কবির বাসায় যাই। অনেকক্ষণ কবির সাথে নানান বিষয় কথা হয়, যদিও উনি বলছিলেন অনেক কম, শুধু মুখ এক ধরনের দুষ্টুমিপূর্ণ হাসিতে উদ্ভাসিত রেখে শুনছিলেন আমার সব কথা। আমি একে একে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম কেন বাংলা সাহিত্যের আর্কাইভিং জরুরী, ই-বুকের প্রয়োজনীয়তা, ইত্যাদি। নিরুদ্দেশ হাওয়ায় হাওয়ায় বইটির ই-বুক সংস্করণের জন্য উনি সানন্দে অনুমতি দিয়েছিলেন। আমি কবির হাত ধরে বসেছিলাম অনেক ক্ষণ।
কবিতা
সিংহ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছিলেন, “…ঢাকা মানেই আমাদের
কাছে প্রথমেই বেলাল চৌধুরী। তার অনেক পরে শেখ মুজিবুর রহমান। … বেলাল নাকি গাঁজা চণ্ডু চরস খায়। শ্মশানে বসে
থাকে। খুব বড় বড় ব্যবসাদার মিনিস্টার সিউডো ইন্টালেকচুয়াল তার তাঁবে। বেলাল
এসবেরও প্রতিবাদ করত না, মিটমিটি হাসত। বহু মহিলা বেলালের জন্য পাগল।
তাই বেলালকে ঘিরে রহস্য। বেলালকে ঘিরে জল্পনা কল্পনা। কিন্তু সামনে এলেই, রবীন্দ্রনাথের অতিথি গল্পের সেই তারাপদকে মনে পড়ত। সেই পবিত্র অনাসক্ত অনঘ
বালকটি।”
কবি
শামসুর রাহমান কবি বেলাল চৌধুরী সম্পর্কে বলেছিলেন, “তরুণ কবিকর্মী
ও সংস্কৃতিসেবীদের মুখে মুখে ফেরে যে কবির নাম তিনি বেলাল চৌধুরী। আজ গার্হস্থ্যের
তাবুতে আশ্রয় নিলেও এক সময় প্রথাবিরোধী জীবনযাপনের মাধ্যমে তিনি এক কিংবদন্তীতে
পরিণত হয়েছিলেন।”
পঞ্চাশ দশকের অনেকের স্মৃতিচারণেই জানা যায় যে বেলাল চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তানের এক জাহাজে করে পালিয়ে কলকাতায় চলে আসেন। কোন জাদুর সম্পর্শে তিনি সম্পূর্ণ অচেনা এক বিশাল শহরের হৃদয় জয় করে ফেলেছিলেন সেটি তাদের বোঝানো যাবে না, যারা তখনকার বেলাল চৌধুরীকে দেখেনি। তাঁকে নিয়ে অনেক গল্প চালু ছিল।