জন্ম থেকে যার জন্য প্রস্তুতি তার নাম মৃত্যু। একজন গড়পড়তা খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে মৃত্যু স্বাভাবিক। মরে গেলে আমরা তাদের পুড়িয়ে দেই অথবা মাটির নিচে শুইয়ে দেই। তারপর ভুলে যাই। মানুষটি যদি আয়ের উৎস হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের জীবনে বেশ ঝামেলা হয়, আমরা মনে রাখি বেশিদিন। নইলে ভুলতে সময় লাগে কম। যারা খুব কাছের বিষাদ, বেদনা, শোক তাদের স্পর্শ করে বেশি। মৃত্যুবোধের অসহায়ত্ব ও বিরাটত্বই পারে মানুষকে জীবনের অনন্ত উপযোগিতা সম্বন্ধে অবহিত করতে। আমাদের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও এই বিষাদ ছুঁয়ে যায় যখন তাঁর নতুন বউঠাকরুন কাদম্বরী আফিম খেয়ে আত্মহত্যা করেন। কাদম্বরী দেবীর মৃত্যু যে রবীন্দ্রনাথকে কতটা আঘাত করেছিল সেটি তাঁর নানান লেখায় আমরা জানতে পারি। সাঙ্ঘাতিক ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন রবীন্দ্রনাথ। জীবনস্মৃতি বইয়ের মৃত্যুশোক অধ্যায়ের একাংশ এমন; "আমার চব্বিশবছর বয়সের সময় মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয় হইল তাহা স্থায়ী পরিচয়। তাহা তাহার পরবর্তী প্রত্যেক বিচ্ছেদশোকের সঙ্গে মিলিয়া অশ্রুর মালা দীর্ঘ করিয়া গাঁথিয়া চলিয়াছে। শিশুবয়েসের লঘু জীবন বড়ো বড়ো মৃত্যুকেও অনায়াসেই পাশ কাটাইয়া ছুটিয়া যায়-- কিন্তু অধিক বয়সে মৃত্যুকে অত সহজে ফাঁকি দিয়া এড়াইয়া চলিবার পথ নাই। তাই সেদিনকার সমস্ত দুঃসহ আঘাত বুক পাতিয়া লইতে হইয়াছিল। জীবনের মধ্যে কোথাও যে কিছুমাত্র ফাঁক আছে, তাহা তখন জানিতাম না; সমস্তই হাসিকান্নায় একেবারে নিরেট করিয়া বোনা। তাহাকে অতিক্রম করিয়া আর কিছুই দেখা যাইত না, তাই তাহাকে একেবারে চরম করিয়াই গ্রহণ করিয়াছিলাম। এমনসময় কোথা হইতে মৃত্যু আসিয়া এই অত্যন্ত প্রত্যক্ষ জীবনটার একটা প্রান্ত যখন এক মুহূর্তের মধ্যে ফাঁক করিয়া দিল, তখন মনটার মধ্যে সে কী ধাঁধাই লাগিয়া গেল। চারি দিকে গাছপালা মাটিজল চন্দ্রসূর্য গ্রহতারা তেমনি নিশ্চিত সত্যেরই মতো বিরাজ করিতেছে, অথচ তাহাদেরই মাঝখানে তাহাদেরই মতো যাহা নিশ্চিত সত্য ছিল-- এমন-কি, দেহ প্রাণ হৃদয় মনের সহস্রবিধ স্পর্শের দ্বারা যাহাকে তাহাদের সকলের চেয়েই বেশি সত্য করিয়াই অনুভব করিতাম সেই নিকটের মানুষ যখন এত সহজে এক নিমিষে স্বপ্নের মতো মিলাইয়া গেল তখন সমস্ত জগতের দিকে চাহিয়া মনে হইতে লাগিল, এ কী অদ্ভুত আত্মখণ্ডন! যাহা আছে এবং যাহা রহিল না, এই উভয়ের মধ্যে কোনোমতে মিল করিব কেমন করিয়া!"
Book Morning
Notes
জন্ম থেকে যার জন্য প্রস্তুতি তার নাম মৃত্যু। একজন গড়পড়তা খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে মৃত্যু স্বাভাবিক। মরে গেলে আমরা তাদের পুড়িয়ে দেই অথবা মাটির নিচে শুইয়ে দেই। তারপর ভুলে যাই। মানুষটি যদি আয়ের উৎস হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের জীবনে বেশ ঝামেলা হয়, আমরা মনে রাখি বেশিদিন। নইলে ভুলতে সময় লাগে কম। যারা খুব কাছের বিষাদ, বেদনা, শোক তাদের স্পর্শ করে বেশি। মৃত্যুবোধের অসহায়ত্ব ও বিরাটত্বই পারে মানুষকে জীবনের অনন্ত উপযোগিতা সম্বন্ধে অবহিত করতে। আমাদের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও এই বিষাদ ছুঁয়ে যায় যখন তাঁর নতুন বউঠাকরুন কাদম্বরী আফিম খেয়ে আত্মহত্যা করেন। কাদম্বরী দেবীর মৃত্যু যে রবীন্দ্রনাথকে কতটা আঘাত করেছিল সেটি তাঁর নানান লেখায় আমরা জানতে পারি। সাঙ্ঘাতিক ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন রবীন্দ্রনাথ। জীবনস্মৃতি বইয়ের মৃত্যুশোক অধ্যায়ের একাংশ এমন; "আমার চব্বিশবছর বয়সের সময় মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয় হইল তাহা স্থায়ী পরিচয়। তাহা তাহার পরবর্তী প্রত্যেক বিচ্ছেদশোকের সঙ্গে মিলিয়া অশ্রুর মালা দীর্ঘ করিয়া গাঁথিয়া চলিয়াছে। শিশুবয়েসের লঘু জীবন বড়ো বড়ো মৃত্যুকেও অনায়াসেই পাশ কাটাইয়া ছুটিয়া যায়-- কিন্তু অধিক বয়সে মৃত্যুকে অত সহজে ফাঁকি দিয়া এড়াইয়া চলিবার পথ নাই। তাই সেদিনকার সমস্ত দুঃসহ আঘাত বুক পাতিয়া লইতে হইয়াছিল। জীবনের মধ্যে কোথাও যে কিছুমাত্র ফাঁক আছে, তাহা তখন জানিতাম না; সমস্তই হাসিকান্নায় একেবারে নিরেট করিয়া বোনা। তাহাকে অতিক্রম করিয়া আর কিছুই দেখা যাইত না, তাই তাহাকে একেবারে চরম করিয়াই গ্রহণ করিয়াছিলাম। এমনসময় কোথা হইতে মৃত্যু আসিয়া এই অত্যন্ত প্রত্যক্ষ জীবনটার একটা প্রান্ত যখন এক মুহূর্তের মধ্যে ফাঁক করিয়া দিল, তখন মনটার মধ্যে সে কী ধাঁধাই লাগিয়া গেল। চারি দিকে গাছপালা মাটিজল চন্দ্রসূর্য গ্রহতারা তেমনি নিশ্চিত সত্যেরই মতো বিরাজ করিতেছে, অথচ তাহাদেরই মাঝখানে তাহাদেরই মতো যাহা নিশ্চিত সত্য ছিল-- এমন-কি, দেহ প্রাণ হৃদয় মনের সহস্রবিধ স্পর্শের দ্বারা যাহাকে তাহাদের সকলের চেয়েই বেশি সত্য করিয়াই অনুভব করিতাম সেই নিকটের মানুষ যখন এত সহজে এক নিমিষে স্বপ্নের মতো মিলাইয়া গেল তখন সমস্ত জগতের দিকে চাহিয়া মনে হইতে লাগিল, এ কী অদ্ভুত আত্মখণ্ডন! যাহা আছে এবং যাহা রহিল না, এই উভয়ের মধ্যে কোনোমতে মিল করিব কেমন করিয়া!"
Share /
জন্ম থেকে যার জন্য প্রস্তুতি তার নাম মৃত্যু।
by rit.oneSaturday, February 29, 2020
জন্ম থেকে যার জন্য প্রস্তুতি তার নাম মৃত্যু। একজন গড়পড়তা খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে মৃত্যু স্বাভাবিক। মরে গেলে আমরা তাদের পুড়িয়ে দেই অথবা মাটির নিচে শুইয়ে দেই। তারপর ভুলে যাই। মানুষটি যদি আয়ের উৎস হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের জীবনে বেশ ঝামেলা হয়, আমরা মনে রাখি বেশিদিন। নইলে ভুলতে সময় লাগে কম। যারা খুব কাছের বিষাদ, বেদনা, শোক তাদের স্পর্শ করে বেশি। মৃত্যুবোধের অসহায়ত্ব ও বিরাটত্বই পারে মানুষকে জীবনের অনন্ত উপযোগিতা সম্বন্ধে অবহিত করতে। আমাদের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও এই বিষাদ ছুঁয়ে যায় যখন তাঁর নতুন বউঠাকরুন কাদম্বরী আফিম খেয়ে আত্মহত্যা করেন। কাদম্বরী দেবীর মৃত্যু যে রবীন্দ্রনাথকে কতটা আঘাত করেছিল সেটি তাঁর নানান লেখায় আমরা জানতে পারি। সাঙ্ঘাতিক ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন রবীন্দ্রনাথ। জীবনস্মৃতি বইয়ের মৃত্যুশোক অধ্যায়ের একাংশ এমন; "আমার চব্বিশবছর বয়সের সময় মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয় হইল তাহা স্থায়ী পরিচয়। তাহা তাহার পরবর্তী প্রত্যেক বিচ্ছেদশোকের সঙ্গে মিলিয়া অশ্রুর মালা দীর্ঘ করিয়া গাঁথিয়া চলিয়াছে। শিশুবয়েসের লঘু জীবন বড়ো বড়ো মৃত্যুকেও অনায়াসেই পাশ কাটাইয়া ছুটিয়া যায়-- কিন্তু অধিক বয়সে মৃত্যুকে অত সহজে ফাঁকি দিয়া এড়াইয়া চলিবার পথ নাই। তাই সেদিনকার সমস্ত দুঃসহ আঘাত বুক পাতিয়া লইতে হইয়াছিল। জীবনের মধ্যে কোথাও যে কিছুমাত্র ফাঁক আছে, তাহা তখন জানিতাম না; সমস্তই হাসিকান্নায় একেবারে নিরেট করিয়া বোনা। তাহাকে অতিক্রম করিয়া আর কিছুই দেখা যাইত না, তাই তাহাকে একেবারে চরম করিয়াই গ্রহণ করিয়াছিলাম। এমনসময় কোথা হইতে মৃত্যু আসিয়া এই অত্যন্ত প্রত্যক্ষ জীবনটার একটা প্রান্ত যখন এক মুহূর্তের মধ্যে ফাঁক করিয়া দিল, তখন মনটার মধ্যে সে কী ধাঁধাই লাগিয়া গেল। চারি দিকে গাছপালা মাটিজল চন্দ্রসূর্য গ্রহতারা তেমনি নিশ্চিত সত্যেরই মতো বিরাজ করিতেছে, অথচ তাহাদেরই মাঝখানে তাহাদেরই মতো যাহা নিশ্চিত সত্য ছিল-- এমন-কি, দেহ প্রাণ হৃদয় মনের সহস্রবিধ স্পর্শের দ্বারা যাহাকে তাহাদের সকলের চেয়েই বেশি সত্য করিয়াই অনুভব করিতাম সেই নিকটের মানুষ যখন এত সহজে এক নিমিষে স্বপ্নের মতো মিলাইয়া গেল তখন সমস্ত জগতের দিকে চাহিয়া মনে হইতে লাগিল, এ কী অদ্ভুত আত্মখণ্ডন! যাহা আছে এবং যাহা রহিল না, এই উভয়ের মধ্যে কোনোমতে মিল করিব কেমন করিয়া!"
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments
Post a Comment