Black Lives Matter
George Floyd
Notes

গত কয়েকদিন ধরে আমেরিকা বর্ণবৈষম্য ইস্যুতে জ্বলছে। আমি যেখানে থাকি সেখানে সাদা মানুষের সংখ্যাই বেশি। শহরের একাংশ যখন প্রতিবাদে সোচ্চার তখন উল্টো দিকে দামি রেস্তোরাঁগুলোয় বসার জায়গা নেই। এই হলো ভোগবাদী আমেরিকা। এদেশের যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমন কলঙ্কিত দিকও রয়েছে। আজ সেই অন্ধকার নিয়ে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে। আমি জানি অনেকেই যারা এই ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার আন্দোলন দেখেন তারা কেবল দাঙ্গা এবং লুটপাটই দেখেন। তাদের প্রথম প্রতিক্রিয়া হলো "two wrongs don’t make a right"। আমি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পক্ষে, কারণ মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এবং মহাত্মা গান্ধীর আমার সামাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তাধারার উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। তবে সাথে আমি আপনাদের একটি অনুরোধ করছি, যদি আপনি ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারটির গুরুত্ব বুঝে থাকেন তবে এই মুহুর্তে একটি কিশোর কৃষ্ণাঙ্গ ছেলেমেয়ের টিভিতে খবর দেখার দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবুন। তারা কালো মানুষগুলির প্রতি ঘৃণা ও গোঁড়ামি দেখছে এবং দেখে বড় হচ্ছে। এবং ভাবছে শুধু কালো বলেই এমন একদিন তার সাথেও হতে পারে। বিষয়টি কতটা আঘাত করতে পারে তাদের মনের উপর তা ভাবতে পারেন? আমি তো পুরোপুরি পারি না। একটা বিষয় কি আমাকে কেউ বুঝিয়ে বলবেন, ব্রিটিশদের অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর জন্য যতটা আমেরিকানরা ফাউন্ডিং-ফাদারদের সন্মানের সাথে স্মরণ করে, ততটা এই জাতিগত অবিচারের বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের জন্য নয় কেন? আমেরিকান সাদারা কি ভুলে গেছে যে তাদের পিতৃপুরুষরাও এভাবে সব পুড়িয়ে দিয়েছিল, শুধুমাত্র ট্যাক্স বাড়িয়ে দেওয়ার কারনে তারা লুটপাট করেছিল। সেই সব সহিংসতার জন্যেই আজ আমেরিকানরা বাকস্বাধীনতা ও এমন অনেক সুবিধা ভোগ করছে। অবস্থার বাস্তব এবং ক্রম পরিবর্তনে মানুষের প্রাকৃতিক ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা যখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল, তখন সেই স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্যই রাষ্ট্রের কাছে সে সমর্পণ করেছিল তার নিজের স্বাধীনতা। রাষ্ট্রের কর্তব্য হচ্ছে সামগ্রিকভাবে ব্যক্তির স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। স্বাধীনতাকে হারাবার জন্য মানুষ তার স্বাধীনতাকে সমর্পণ করেনি। তা সে করতে পারে না। কারণ মানুষ কথার অর্থই হচ্ছে স্বাধীনতা। বিকৃত চিন্তার তথাকথিত সভ্য মানুষ এই কথাটাই ভুলে যায়। তাই সে স্বাধীনতা বলতে বােঝে অপরের উপর অধীনতা চাপিয়ে দেওয়ার স্বাধীনতা। মানুষের সাথে রাষ্ট্রের সেই সামাজিক চুক্তি যখন খর্ব হয় তখন two wrongs don’t make a right বলে কোন লাভ হয় না। আমি বলছি না যে এর মধ্যে কিছু বদ মানুষ ঢুকে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করছে না। এই সুযোগ সন্ধানীরা টিকে থাকবে না প্রতিবাদটাই টিকে থাকবে।
হ্যাশট্যাগ ব্ল্যাকলাইভস্ম্যাটার আন্দোলনের পিছনের মূল ধারণা সম্পর্কে চিন্তা করুন ভাবুন এটা কেন শুরু হয়েছিল। ভবিষ্যতের ইতিহাসের বইগুলিতে যখন এটি লেখা হবে তখন আপনি ইতিহাসের কোন দিকে থাকতে চাইবেন? আমার মনে হয় সময় এসেছে আমেরিকার পতাকা এখন উল্টো করে ধরার, যেমনটি এই ছবিতে আমরা দেখছি।
Notes
সৈয়দ মুজতবা আলী
বই আমাকে শেখায়
চিন্তা করা।
চিন্তাশীল হওয়া
পুনর্বিবেচনা করা।
যা চিন্তা করলাম তা
ঝালিয়ে নেওয়া।
চিন্তা কিভাবে করতে হয়
তাও বই শেখায়
চিন্তারও যে চিন্তা থাকে
তা ঐ বই থেকে শেখা।
বই হলো ছবির মাঝে প্রতিকৃতি
যা বলে চিন্তা করো।
মানুষ বই আনন্দের জন্য পড়ে না। যদি তাই হতো তবে প্রচুর বই বিক্রি হতো। যারা বই আনন্দের জন্য পড়ে তাদের মধ্যে অল্পকিছু মানুষ বই কেনে। যারা বই কেনে তাদের মধ্যেও অল্পকিছু মানুষ কেনে চিন্তাশীল বই। চিন্তাশীল বই যদি কালেভদ্রে হয়ে যায় বেস্টসেলার তবু পড়া হয় না। সাজিয়ে রাখা হয়।
তাই বাজারে ভোঁতা বইয়ের সংখ্যাই বেশি। চোখা-ভোঁতা যে বই কিনুন মনে রাখবেন যেবই আপনাকে ভাবায় না সেবই বই নয়।
বই কেনা - সৈয়দ মুজতবা আলী
মাছি-মারা-কেরানী নিয়ে যত ঠাট্টা-রসিকতাই করি না কেন, মাছি ধরা যে কত শক্ত, সে কথা পর্যবেক্ষণশীল ব্যক্তিমাত্রই স্বীকার করে নিয়েছেন। মাছিকে যেদিক দিয়েই ধরতে যান না কেন, সে ঠিক সময় উড়ে যাবেই। কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গিয়েছে, দুটো চোখ নিয়েই মাছির কারবার নয়, তার সমস্ত মাথা জুড়ে নাকি গাদা গাদা চোখ বসানো আছে। আমরা দেখতে পাই শুধু সামনের দিক, কিন্তু মাছির মাথার চতুর্দিকে চক্রাকারে চোখ বসানো আছে বলে সে একই সময়ে সমস্ত পৃথিবীটা দেখতে পায়।
তাই নিয়ে গুণী ও জ্ঞানী আনাতোল ফ্রাঁস দুঃখ করে বলেছেন, ‘হায়, আমার মাথার চতুর্দিকে যদি চোখ বসানো থাকতো, তাহলে আচক্রবালবিস্তৃত এই সুন্দরী ধরণীর সম্পূর্ণ সৌন্দর্য একসঙ্গেই দেখতে পেতুম।’
কথাটা যে খাঁটি, সে-কথা চোখ বন্ধ করে একটুখানি ভেবে নিলেই বোঝা যায়। এবং বুঝে নিয়ে তখন এক আপশোস ছাড়া অন্য কিছু করবার থাকে না। কিন্তু এইখানেই ফ্রাঁসের সঙ্গে সাধারণ লোকের তফাৎ। ফ্রাঁস সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, ‘কিন্তু আমার মনের চোখ তো মাত্র একটি কিংবা দুটি নয়। মনের চোখ বাড়ানো-কমানো তো সম্পূর্ণ আমার হাতে। নানা জ্ঞানবিজ্ঞান যতই আমি আয়ত্ত করতে থাকি, ততই এক-একটা করে আমার মনের চোখ ফুটতে থাকে।’
পৃথিবীর আর সব সভ্য জাত যতই চোখের সংখ্যা বাড়াতে ব্যস্ত, আমরা ততই আরব্য-উপন্যাসের এক-চোখ দৈত্যের মত ঘোঁৎ ঘোঁৎ করি আর চোখ বাড়াবার কথা তুললেই চোখ রাঙাই।
চোখ বাড়াবার পন্থাটা কি? প্রথমত—বই পড়া, এবং তার জন্য দরকার বই কেনার প্রবৃত্তি।
মনের চোখ ফোটানোর আরো একটা প্রয়োজন আছে। বারট্রান্ড রাসেল বলেছেন, ‘সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে, মনের ভিতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার ভিতর ডুব দেওয়া। যে যত বেশি ভুবন সৃষ্টি করতে পারে, যন্ত্রণা এড়াবার ক্ষমতা তার ততই বেশি হয়।’
অর্থাৎ সাহিত্যে সান্ত্বনা না পেলে দর্শন, দর্শনে কুলিয়ে উঠতে না পারলে ইতিহাস, ইতিহাস হার মানলে ভূগোল—আরো কত কি।
কিন্তু প্রশ্ন, এই অসংখ্য ভুবন সৃষ্টি করি কি প্রকারে?
বই পড়ে। দেশ ভ্রমণ করে। কিন্তু দেশ ভ্রমণ করার মত সামর্থ্য এবং স্বাস্থ্য সকলের থাকে না, কাজেই শেষ পর্যন্ত বাকি থাকে বই।
কিন্তু বাঙালি নাগর ধর্মের কাহিনী শোনে না। তার মুখে ঐ এক কথা ‘অত কাঁচা পয়হা কোথায়, বাওয়া, যে বই কিনব?’
কথাটার মধ্যে একটুখানি সত্য—কনিষ্ঠাপরিমাণ—লুকনো রয়েছে। সেইটুকু এই যে, বই কিনতে পয়সা লাগে—ব্যস। এর বেশি আর কিছু নয়।
বইয়ের দাম যদি আরো কমানো যায়, তবে আরো অনেক বেশি বই বিক্রি হবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তাই যদি প্রকাশককে বলা হয়, ‘বইয়ের দাম কমাও’, তবে সে বলে ‘বই যথেষ্ট পরিমাণে বিক্রি না হলে বইয়ের দাম কমাবো কি করে?’
‘কেন মশাই, সংখ্যার দিক দিয়ে দেখতে গেলে বাঙলা পৃথিবীর ছয় অথবা সাত নম্বরের ভাষা। এই ধরুন ফরাসি ভাষা। এ-ভাষায় বাঙলার তুলনায় ঢের কম লোক কথা কয়। অথচ যুদ্ধের পূর্বে বারো আনা, চৌদ্দ আনা, জোর পাঁচ সিকে দিয়ে যে-কোন ভাল বই কেনা যেত। আপনারা পারেন না কেন?’
‘আজ্ঞে, ফরাসি প্রকাশক নির্ভয়ে যে-কোন ভালো বই এক ঝট্কায় বিশ হাজার ছাপাতে পারে। আমাদের নাভিশ্বাস ওঠে দু’হাজার ছাপাতে গেলেই, বেশি ছাপিয়ে দেউলে হব নাকি?’
তাই এই অচ্ছেদ্য চক্র। বই সস্তা নয় বলে লোকে বই কেনে না, আর লোকে বই কেনে না বলে বই সস্তা করা যায় না।
এ চক্র ছিন্ন তো করতেই হবে। করবে কে? প্রকাশক না ক্রেতা? প্রকাশকের পক্ষে করা কঠিন, কারণ ঐ দিয়ে পেটের ভাত যোগাড় করে। সে বঁটুকিটা নিতে নারাজ। এক্সপেরিমেন্ট করতে নারাজ—দেউলে হওয়ার ভয়ে।
কিন্তু বই কিনে কেউ তো কখনো দেউলে হয় নি। বই কেনার বাজেট যদি আপনি তিনগুণও বাড়িয়ে দেন, তবু তো আপনার দেউলে হবার সম্ভাবনা নেই। মাঝখান থেকে আপনি ফ্রাঁসের মাছির মত অনেকগুলি চোখ পেয়ে যাবেন, রাসেলের মত এক গাদা নূতন ভুবন সৃষ্টি করে ফেলবেন।
মার্ক টুয়েনের লাইব্রেরিখানা নাকি দেখবার মত ছিল। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত বই, বই, শুধু বই। এমন কি কর্পেটের উপরও গাদা গাদা বই স্তূপীকৃত হয়ে পড়ে থাকত—পা ফেলা ভার। এক বন্ধু তাই মার্ক টুয়েনকে বললেন, ‘বইগুলো নষ্ট হচ্ছে; গোটা কয়েক শেলফ যোগাড় করছ না কেন?’
মার্ক টুয়েন খানিকক্ষণ মাথা নিচু করে ঘাড় চুলকে বললেন, ‘ভাই, বলছে ঠিকই।—কিন্তু লাইব্রেরিটা যে কায়দায় গড়ে তুলেছি, শেলফ তো আর সে কায়দায় যোগাড় করতে পারিনে। শেলফ তো আর বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার চাওয়া যায় না।’
শুধু মার্ক টুয়েনই না, দুনিয়ার অধিকাংশ লোকই লাইব্রেরি গড়ে তোলে কিছু বই কিনে: আর কিছু বই বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার করে ফেরৎ না দিয়ে। যে-মানুষ পরের জিনিস গলা কেটে ফেললেও ছোবে না। সেই লোকই দেখা যায় বইয়ের বেলা সর্বপ্রকার বিবেক-বিবর্জিত, তার কারণটা কি?
এক আরব পণ্ডিতের লেখাতে সমস্যাটার সমাধান পেলুম।
পণ্ডিত লিখেছেন, ‘ধনীরা বলে, পয়সা কামানো দুনিয়াতে সবচেয়ে কঠিন কর্ম। কিন্তু জ্ঞানীরা বলেন, না, জ্ঞানার্জন সবচেয়ে শক্ত কাজ। এখন প্রশ্ন, কার দাবিটা ঠিক, ধনীর না জ্ঞানীর? আমি নিজে জ্ঞানের সন্ধানে ফিরি, কাজেই আমার পক্ষে নিরপেক্ষ হওয়া কঠিন। তবে একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করেছি, সেইটো আমি বিচক্ষণ জনের চক্ষুগোচর করাতে চাই। ধনীর মেহন্নতের ফল হ’ল টাকা। সে ফল যদি কেউ জ্ঞানীর হাতে তুলে দেয়, তবে তিনি সেটা পরমানন্দে কাজে লাগান, এবং শুধু তাই নয়, অধিকাংশ সময়েই দেখা যায়, জ্ঞানীরা পয়সা পেলে খরচ করতে পারেন ধনীদের চেয়ে অনেক ভালো পথে, ঢের উত্তম পদ্ধতিতে। পক্ষাস্তরে জ্ঞানচর্চার ফল সঞ্চিত থাকে পুস্তকরাজিতে এবং সে ফল ধনীদের হাতে গায়ে পড়ে তুলে ধরলেও তারা তার ব্যবহার করতে জানে না-বই পড়তে পারে না।’
আরব পণ্ডিত তাই বক্তব্য শেষ করেছেন কিউ. ই. ডি দিয়ে ‘অতএব প্রমাণ হল জ্ঞানার্জন ধনার্জনের চেয়ে মহত্তর।’
তাই প্রকৃত মানুষ জ্ঞানের বাহন পুস্তক যোগাড় করার জন্য অকাতরে অর্থব্যয় করে। একমাত্র বাঙলা দেশ ছাড়া।
সেদিন তাই নিয়ে শোকপ্রকাশ করাতে আমার জনৈক বন্ধু একটি গল্প বললেন। এক ড্রইংরুম-বিহারিণী গিয়েছেন বাজারে স্বামীর জন্মদিনের জন্য সওগাত কিনতে। দোকানদার এটা দেখায়, সেটা শোকায়, এটা নাড়ে, সেটা কাড়ে, কিন্তু গরবিনী ধনীর (উভয়ার্থে) কিছুই আর মনঃপূত হয় না। সব কিছুই তাঁর স্বামীর ভাণ্ডারে রয়েছে। শেষটায় দোকানদার নিরাশ হয়ে বললে, ‘তবে একখানা ভাল বই দিলে হয় না?’ গরবিনী নাসিকা কুঞ্চিত করে বললেন, ‘সেও তো ওঁর একখানা রয়েছে।’
যেমন স্ত্রী তেমনি স্বামী। একখানা বইই তাদের পক্ষে যথেষ্ট।
অথচ এই বই জিনিসটার প্রকৃত সম্মান করতে জানে ফ্রান্স। কাউকে মোক্ষম মারাত্মক অপমান করতে হলেও তারা ঐ জিনিস দিয়েই করে। মনে করুন আপনার সবচেয়ে ভক্তিভালবাসা দেশের জন্য। তাই যদি কেউ আপনাকে ডাহা বেইজজৎ করতে চায়; তবে সে অপমান করবে। আপনার দেশকে। নিজের অপমান আপনি হয়ত মনে মনে পঞ্চাশ গুণে নিয়ে সয়ে যাবেন, কিন্তু দেশের অপমান আপনাকে দংশন করবে বহুদিন ধরে।
আঁদ্রে জিদে’র মেলা বন্ধুবান্ধব ছিলেন—অধিকাংশই নামকরা লেখক। জিদ রুশিয়া থেকে ফিরে এসে সোভিয়েট রাজ্যের বিরুদ্ধে একখানা প্রাণঘাতী কেতাব ছাড়েন। প্যারিসের স্তালিনীয়ারা তখন লাগল জিদের পিছনে—গালিগালাজ কটুকাটব্য করে জিদের প্রাণ অতিষ্ঠা করে তুললো। কিন্তু আশ্চর্য, জিদের লেখক বন্ধুদের অধিকাংশই চুপ করে সব কিছু শুনে গেলেন, জিদের হয়ে লড়লেন না। জিদের জিগরে জোর চোট লাগল-তিনি স্থির করলেন, এদের একটা শিক্ষা দিতে হবে।
কাগজে বিজ্ঞাপন বেরল। জিদ তাঁর লাইব্রেরিখানা নিলামে বেচে দেবেন বলে মনস্থির করেছেন। প্যারিস খবর শুনে প্রথমটায় মূর্ছা গেল, কিন্তু সম্বিতে ফেরা মাত্রই মুক্তকচ্ছ হয়ে ছুটলো নিলাম-খানার দিকে।
সেখানে গিয়ে অবস্থা দেখে সকলেরই চক্ষুস্থির।
যে-সব লেখক জিদের হয়ে লড়েন নি, তাদের যে-সব বই তারা জিদকে স্বাক্ষর সহ উপহার দিয়েছিলেন, জিদ মাত্র সেগুলো নিলামে চড়িয়েছেন। জিদ শুধু জঞ্জালই বেচে ফেলছেন।
প্যারিসের লোক তখন যে অট্টহাস্য ছেড়েছিল, সেটা আমি ভূমধ্যসাগরের মধ্যিখানে জাহাজে বসে শুনতে পেয়েছিলুম—কারণ খবরটার গুরুত্ব বিবেচনা করে রয়টার সেটা বেতারে ছড়িয়েছিলেন-জাহাজের টাইপ-করা একশো লাইনি দৈনিক কাগজ সেটা সাড়ম্বরে প্রকাশ করেছিল।
অপমানিত লেখকরা ডবল তিন ডবল দামে আপন আপনি বই লোক পাঠিয়ে তড়িঘড়ি কিনিয়ে নিয়েছিলেন-যত কম লোকে কেনা-কাটার খবর জানতে পারে ততই মঙ্গল। (বাঙলা দেশে নাকি একবার এরকম টিকিট বিক্রি হয়েছিল!)
শুনতে পাই, এঁরা নাকি জিদকে কখনো ক্ষমা করেন নি।
(মূল লেখার বানানরীতি অনুসরণ করা হলো)