
গত কয়েকদিন ধরে আমেরিকা বর্ণবৈষম্য ইস্যুতে জ্বলছে। আমি যেখানে থাকি সেখানে সাদা মানুষের সংখ্যাই বেশি। শহরের একাংশ যখন প্রতিবাদে সোচ্চার তখন উল্টো দিকে দামি রেস্তোরাঁগুলোয় বসার জায়গা নেই। এই হলো ভোগবাদী আমেরিকা। এদেশের যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমন কলঙ্কিত দিকও রয়েছে। আজ সেই অন্ধকার নিয়ে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে। আমি জানি অনেকেই যারা এই ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার আন্দোলন দেখেন তারা কেবল দাঙ্গা এবং লুটপাটই দেখেন। তাদের প্রথম প্রতিক্রিয়া হলো "two wrongs don’t make a right"। আমি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পক্ষে, কারণ মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এবং মহাত্মা গান্ধীর আমার সামাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তাধারার উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। তবে সাথে আমি আপনাদের একটি অনুরোধ করছি, যদি আপনি ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারটির গুরুত্ব বুঝে থাকেন তবে এই মুহুর্তে একটি কিশোর কৃষ্ণাঙ্গ ছেলেমেয়ের টিভিতে খবর দেখার দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবুন। তারা কালো মানুষগুলির প্রতি ঘৃণা ও গোঁড়ামি দেখছে এবং দেখে বড় হচ্ছে। এবং ভাবছে শুধু কালো বলেই এমন একদিন তার সাথেও হতে পারে। বিষয়টি কতটা আঘাত করতে পারে তাদের মনের উপর তা ভাবতে পারেন? আমি তো পুরোপুরি পারি না। একটা বিষয় কি আমাকে কেউ বুঝিয়ে বলবেন, ব্রিটিশদের অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর জন্য যতটা আমেরিকানরা ফাউন্ডিং-ফাদারদের সন্মানের সাথে স্মরণ করে, ততটা এই জাতিগত অবিচারের বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের জন্য নয় কেন? আমেরিকান সাদারা কি ভুলে গেছে যে তাদের পিতৃপুরুষরাও এভাবে সব পুড়িয়ে দিয়েছিল, শুধুমাত্র ট্যাক্স বাড়িয়ে দেওয়ার কারনে তারা লুটপাট করেছিল। সেই সব সহিংসতার জন্যেই আজ আমেরিকানরা বাকস্বাধীনতা ও এমন অনেক সুবিধা ভোগ করছে। অবস্থার বাস্তব এবং ক্রম পরিবর্তনে মানুষের প্রাকৃতিক ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা যখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল, তখন সেই স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্যই রাষ্ট্রের কাছে সে সমর্পণ করেছিল তার নিজের স্বাধীনতা। রাষ্ট্রের কর্তব্য হচ্ছে সামগ্রিকভাবে ব্যক্তির স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। স্বাধীনতাকে হারাবার জন্য মানুষ তার স্বাধীনতাকে সমর্পণ করেনি। তা সে করতে পারে না। কারণ মানুষ কথার অর্থই হচ্ছে স্বাধীনতা। বিকৃত চিন্তার তথাকথিত সভ্য মানুষ এই কথাটাই ভুলে যায়। তাই সে স্বাধীনতা বলতে বােঝে অপরের উপর অধীনতা চাপিয়ে দেওয়ার স্বাধীনতা। মানুষের সাথে রাষ্ট্রের সেই সামাজিক চুক্তি যখন খর্ব হয় তখন two wrongs don’t make a right বলে কোন লাভ হয় না। আমি বলছি না যে এর মধ্যে কিছু বদ মানুষ ঢুকে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করছে না। এই সুযোগ সন্ধানীরা টিকে থাকবে না প্রতিবাদটাই টিকে থাকবে।
হ্যাশট্যাগ ব্ল্যাকলাইভস্ম্যাটার আন্দোলনের পিছনের মূল ধারণা সম্পর্কে চিন্তা করুন ভাবুন এটা কেন শুরু হয়েছিল। ভবিষ্যতের ইতিহাসের বইগুলিতে যখন এটি লেখা হবে তখন আপনি ইতিহাসের কোন দিকে থাকতে চাইবেন? আমার মনে হয় সময় এসেছে আমেরিকার পতাকা এখন উল্টো করে ধরার, যেমনটি এই ছবিতে আমরা দেখছি।
No comments
Post a Comment